সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রেজাউল করিম, রংপুর

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০১:৩৬ এএম

আশ্রয়ণ প্রকল্প হাজারো ঘর দখল করে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র আ.লীগের

রেজাউল করিম, রংপুর

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০১:৩৬ এএম

আশ্রয়ণ প্রকল্প  হাজারো ঘর দখল করে  দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র  আ.লীগের

রংপুরের আট উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের হাজারো ঘর এখনো আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দখলে। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের জন্য ঘরগুলোকে নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে।

এ ছাড়া মাদক সেবন ও বেচাকেনার পাশাপাশি ঘরগুলো এখন নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ের সুতিকাগার হয়ে উঠেছে। এতে প্রকৃত ভূমিহীনদের আশ্রয়হীন হওয়ার সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি জেলাজুড়ে রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কাও করা হচ্ছে। তাই দ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জেলা প্রশাসকের অফিস ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলার আট উপজেলার মধ্যে তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও সদরসহ সাতটি উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয় বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে। এ ছাড়া পূর্ব থেকে যেখানে গুচ্ছগ্রাম ছিল, সেগুলো সংস্কারের পাশাপাশি ব্যারাক নির্মাণের জন্য তালিকা করা হয়।

জানা গেছে, ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নাম দিয়ে ওই সময় গৃহ নির্মাণ শুরু হয়। ছয় হাজার ৫৪৮ জন ভূমি ও গৃহহীনের তালিকা করা হয়। ওই তালিকা অনুযায়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ধাপে ধাপে নির্মাণ করা হয়। প্রথম থেকে পঞ্চম ধাপে গিয়ে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এবং তার আগে জেলায় ছয় হাজার ১৩০ জন গৃহহীনের নামে বরাদ্দ দেখানো হয়।

এরমধ্যে প্রথম থেকে পঞ্চম ধাপে বদরগঞ্জ উপজেলায় ৮১৫টি, তারাগঞ্জে ৭১৪টি, সদরে ব্যারাকসহ ৬৬৭টি, গঙ্গাচড়ায় ব্যারাকসহ ৯৯০টি, কাউনিয়ায় ব্যারাকসহ ৯১৩টি, পীরগাছায় ব্যারাকসহ ৯৫৫টি, মিঠাপুকুরে ব্যারাকসহ এক হাজার ৭৫৮টি এবং পীরগঞ্জ উপজেলায় ব্যারাকসহ এক হাজার ৯৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রথম ধাপে একটি ঘর নির্মাণে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও পর্যায়ক্রমে তিন লাখ চার হাজার টাকা বরাদ্দে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, সারি সারি আধাপাকা ও টিনশেড ঘরে রয়েছে দুটি কক্ষ। প্রতিটি ঘরে ব্যয় হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যে দুই শতক জমিসহ ঘরগুলো বাসিন্দাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ঘরগুলোয় একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগারের পাশাপাশি রয়েছে বিদ্যুৎ আর সুপেয় পানির ব্যবস্থাও। কিন্তু সেখানকার অধিকাংশ ঘরই ফাঁকা। কিছু কিছু ঘরে তালা দেখা গেলেও মাদকের গন্ধ বেরোচ্ছে।

জানা গেছে, আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছিলেন আকবর আলী। তার বাড়ি বারো বিগায়। কিন্তু বর্তমানে ওই ঘরে থাকেন মহিদুল নামে এক ব্যক্তি। মহিদুলের কাছ থেকে জোর করে ঘরটির দখল নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেস আলী। অন্যদিকে সবজা বেগমের ঘরের দখল নিয়েছেন যুবলীগের বাবলু। বাবলু  ঘরটি ভাড়া দিয়েছেন ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কাছে। রংপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় সব ঘর ও ব্যারাকেই  এমন অনিয়ম ও দখলদারিত্ব দেখা গেছে।
বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুরের বাসিন্দা বেলাল হোসাইন ও আব্দুল গনি জানান, দামোদরপুর ইউনিয়নের চম্পাতলি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ ঘর জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে মাদক কারবারি ও আওয়ামী লীগের লোকজনের আনাগোনা বেশি।

মিঠাপুকুর উপজেলার ওয়াজেদ আলী ও সাহেব মিয়া জানান, প্রকৃত ভূমি-গৃহহীনরা ঘর বরাদ্দ পাননি। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে যাদের নিজস্ব বাড়ি ও জমিজমা রয়েছে এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত, তাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাদের কেউ এখন ঘরে থাকছেন না। রাত হলে অনেক ঘরে মাদকের আখড়া বসে। আবার অনেক ঘরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিটিং করেন। এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে তারা মনে করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আবুবক্কর ও আমজাদ হোসেন জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। বিশেষ করে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও তাঁতী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। কিছু ভূমিহীন ঘর পেলেও পরবর্তীতে তাদের উচ্ছেদ করে আওয়ামী দোসরদের দেওয়া হয়েছে।

তারা আরও জানান, রাতে ঘরগুলোয় মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের জন্য ঘরগুলোকে মিটিং ও আলোচনার নিরাপদ স্থান বানিয়েছেন। দ্রুত আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের কাছ থেকে ঘরগুলো উদ্ধার করে প্রকৃত ভূমি-গৃহহীনদের বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
এ বিষয়ে বদরগঞ্জ ‎উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা, গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, এর আগে কী অনিয়ম হয়েছে বা কী হয়নি সে বিষয়গুলো লিখিত আকারে আমাদের কাছে কেউ জানায়নি। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কিছু ঘরে লোক থাকে না বলে শুনেছি। ওই ঘরগুলো চিহ্নিত করে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের লোকজনকে দেওয়া হবে। পরে তাদের ভূমির দলিলসহ ঘর হস্তান্তর করা হবে।

এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, গৃহ ও ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে পূর্বে কী করা হয়েছে, কাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, এখনো কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না, বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!