প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেও অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), নাকি শিক্ষা বোর্ড বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করবেÑ এ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংকট। মাউশি বলছে, বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজন করার মতো সক্ষমতা তাদের নেই আর শিক্ষা বোর্ড বলছে, বৃত্তি আয়োজন তাদের আইনে নেই।
১৩ বছর পর এবার বৃত্তি নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি বৃত্তি পরীক্ষার নীতিমালা। তবে সব জটিলতা কাটিয়ে শিগগিরই বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে বলে আশাবাদী শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা ছিল না। তখন এই দুই শ্রেণিতে মেধা যাচাইয়ের জন্য নেওয়া হতো বৃত্তি পরীক্ষা। সর্বশেষ ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। মূলত পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নতুন কারিকুলাম চালু হওয়ার পর বৃত্তি পরীক্ষা বাদ দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসির মতো এই পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়।
তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির গত বছর থেকে পিএসসি ও জেএসসি বাদ দিয়ে আগের মতো স্কুলের অধীনে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এরপর থেকে নানা দাবির মুখে এবার পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা হবে বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা চালু নিয়ে সম্প্রতি একটি সভা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আর শিক্ষা বোর্ড নাকি শিক্ষা অধিদপ্তর এ বৃত্তি পরীক্ষার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে সে নিয়ে দেখা দিয়েছে সংকট।
সূত্র জানায়, অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা পুনরায় চালু করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গত ২০ জুলাই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বেগম বদরুন নাহার। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা এই বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা পুনঃপ্রবর্তন নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়।
বৈঠক সূত্র আরও জানায়, এক সময় অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। মাউশির ৯টি অঞ্চলের মাধ্যমেই এই পরীক্ষা নেওয়া হতো। কিন্তু পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে মাউশির অনেক কর্মকর্তা রদবদল হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষা নেওয়ার সেই সক্ষমতা এখন নেই বলে জানিয়েছেন মাউশির কর্মকর্তারা। তারা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলছেন। তবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক কমিটির নেতৃত্বে থাকা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, তাদের কাজ হলো পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া ও পাবলিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট দেওয়া। কোনো বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া শিক্ষা বোর্ডগুলোর আইনের মধ্যে পড়ে না। পরীক্ষা নিয়ে দুই পক্ষের রশি টানাটানির মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় পরবর্তী মিটিংয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ছাড়াও এর আগে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া নির্দিষ্ট শতাংশের ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হতো। বর্তমানে বৃত্তি পরীক্ষার নতুন নীতিমালা এখনো না থাকায় কত শতাংশ শিক্ষার্থীকে এ পরীক্ষায় বসতে হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, চলতি বছর থেকে অষ্টম শ্রেণিতে আবারো বৃত্তি পরীক্ষা চালু হচ্ছে। পূর্বে অনুসরণ করা পদ্ধতিতেই এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে নাকি নতুন কোনো পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, পরীক্ষা পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
মাউশির মহাপরিচালক ড. মুহাম্মদ আজাদ খানকে বিষয়টি নিয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বেগম বদরুন নাহার বলেন, পাবলিক পরীক্ষার মতো জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা থাকছে না। চলতি শিক্ষা বছর থেকে বৃত্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হচ্ছে, যেন শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধা যাচাই করা যায়।
আপনার মতামত লিখুন :