ঢাকা বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কাশিপুর-জমিদারবাড়ি ধ্বংসের পথে

মো. মিঠুন মাহমুদ, চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ১২:৫২ এএম

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কাশিপুর গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের এক নিদর্শন, জমিদার বিনয় কুমার মজুমদারের বাড়ি। অথচ এই বাড়িটিই আজ অযতœ-অবহেলায় ধ্বংসের পথে। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর ছোটগল্প মহেশ যে বাড়িকে ঘিরে লেখা হয়েছিল, সেটি এখন ভাঙাচোরা দেয়াল, ভগ্ন আসবাব আর ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপত্য নিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে।

১৮৬১ সালে নির্মিত এই জমিদারবাড়িটি একসময় ছিল ক্ষমতার প্রতীক। বিনয় কুমার মজুমদারের অত্যাচারী শাসনে তটস্থ থাকত সাধারণ প্রজারা। শরৎচন্দ্র মামাবাড়ি বেড়াতে এসে কাছ থেকে দেখেছিলেন প্রজাদের সেই দুঃসহ জীবন। প্রজাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন আর এক কৃষক পরিবারের করুণ বাস্তবতা তাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেখান থেকেই জন্ম নেয় বিখ্যাত ছোটগল্প মহেশÑ যেখানে কৃষক গফুর, তার মেয়ে আমেনা এবং গরু মহেশের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।

কাশিপুর গ্রাম ঘুরলে দেখা মেলে জমিদারবাড়ির ভগ্নচিত্র। ধ্বংসপ্রায় প্রধান ভবনের পাশে এখনো টিকে আছে গোলাঘর, কুয়া, খাট-পালঙ্ক, সোফা, টেবিল ও মাটির নিচ থেকে পানি তোলার পুরোনো মোটর। ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন বটগাছ আর কৃষ্ণচূড়া। তবে সময়ের আঘাতে সব কিছুই হারাচ্ছে নান্দনিকতা ও ঐতিহাসিক মূল্য।

বাড়ির বর্তমান বাসিন্দা হাবিল ও কাবিল নামে দুই ভাই জানান, ‘এখানে থাকা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু শরৎচন্দ্রের স্মৃতির কারণে এখানেই বসবাস করছি। দেশের নানা জায়গা থেকে মানুষ বাড়িটি দেখতে আসে।’

এ বাড়ির খ্যাতি সীমিত নয় কেবল স্থানীয়দের কাছে। খুলনা থেকে আসা কলেজছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান বললেন, ‘মহেশ গল্প পড়ে বহুদিন ধরে আশা করছিলাম বাড়িটি দেখব। এসে ভালো লাগল; তবে দুঃখ হচ্ছে, বাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। সংরক্ষণ করা গেলে এটি দুর্দান্ত পর্যটনকেন্দ্র হতে পারত।’

স্থানীয়রা মনে করেন, জমিদারবাড়িটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটন এলাকা। এতে যেমন বাড়িটি রক্ষা পাবে, তেমনি এলাকায় কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।

কাশিপুর গ্রামের শিক্ষক শামিম হোসেনের দাবি, ‘এটি জীবননগর উপজেলার ঐতিহ্যের অংশ। মহেশ গল্পের জন্মস্থান হিসেবে এটি সংরক্ষণ অপরিহার্য। প্রশাসনিক উদ্যোগ থাকলে বাড়িটি সংস্কার ও পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।’

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল আমিন জানান, ‘জমিদারবাড়িটি এলাকার ইতিহাস বহন করছে। সংরক্ষণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’

আজ যখন দেশজুড়ে ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণের দাবি বাড়ছে, তখন শরৎচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত কাশিপুর জমিদারবাড়ির দ্রুত সংস্কার অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। নইলে সময়ের প্রবাহে হারিয়ে যাবে ইতিহাসের মূল্যবান সাক্ষী, হারাবে একটি সাহিত্যভূমির স্মারকও।