ঢাকা শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫

পূজার ছুটিতে ফাঁকা ঢাকা নেই চিরচেনা যানজট

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৫, ১২:৩১ এএম

শারদীয় দুর্গাপূজা আর সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনের ছুটিতে রাজধানী ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা। ছুটির দ্বিতীয় দিন গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর রাজধানীতে প্রতিদিনের চিরচেনা যানজট, অফিসগামী মানুষের ভিড় কিংবা সড়কে গণপরিবহনের ঠাসাঠাসিÑ কোনোটাই তেমন চোখে পড়েনি। প্রধান সড়কগুলোতে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় যানবাহন কমে যায় কয়েক গুণ। তবে বেশির ভাগ প্রধান সড়কে রিকশার রাজত্ব দেখা গেছে। 

স্বজনদের সঙ্গে পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করতে কিংবা টানা চার দিন ছুটি পাওয়ায় প্রিয়জনের কাছে ফিরতে লাখো মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। ফলে মঙ্গল ও বুধবার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। গাবতলী, কল্যাণপুর, ফুলবাড়িয়া, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালের টিকিট কাউন্টারের সামনে ছিল লম্বা লাইন। দক্ষিণাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলমুখী বাসগুলোতে সিট ফাঁকা ছিল না। অনেকেই টিকিট না পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ভ্রমণ করেছেন। 

ছুটিতে অনেক মানুষ ঢাকা ছাড়ায় গতকাল অনেকেই উপভোগ করেছেন ভিন্ন রূপের ঢাকা। ফাঁকা রাস্তায় অবাধে চলাচল করছেন তারা। রাজধানীর মিরপুর, ধানমন্ডি, শাহবাগ, ফার্মগেট, মতিঝিল ও গুলিস্তানের মতো ব্যস্ত এলাকাগুলোর প্রধান সড়কে বাস ও অন্যান্য গাড়ি কম থাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও প্যাডেলচালিত রিকশার চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। স্বল্প দূরত্বের যাতায়াতে এসব বাহনই ভরসা হয়ে উঠেছে নগরবাসীর। যেসব সড়কে সাধারণত কয়েক মিনিটের পথ অতিক্রম করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায়, সেখানে মাত্র কয়েক মিনিটেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন যাত্রীরা। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, ব্যাংক-বিমা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় রাজধানীতে নেমে এসেছে একধরনের নীরবতা।

পথচারীরা বলছেন, ব্যস্ত সড়কগুলোতে আজ ভিন্ন এক দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। যেখানে সাধারণত হাঁটাহাঁটি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে, সেখানে আজ নির্ভারভাবে চলাচল করা যাচ্ছে। অনেকেই জানিয়েছেন, সাধারণ সময়ে অফিসগামী মানুষের ভিড়, যানবাহনের হর্ন আর ধাক্কাধাক্কির কারণে রাস্তায় নামা কষ্টকর হয়ে ওঠে। কিন্তু আজ রাস্তায় মানুষের চাপ কম থাকায় সহজেই চলাচল করতে পারছেন তারা।

অনেকে আবার বলছেন, নগরীর এই নীরবতা কিছুটা অচেনা মনে হলেও স্বস্তিদায়ক। বিশেষ করে বয়স্ক ও নারী-শিশুদের জন্য এই পরিবেশে হাঁটা তুলনামূলক নিরাপদ। তবে কিছু পথচারীর অভিযোগ, রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকলেও গণপরিবহনের সংকট রয়েছে। বাসে যাত্রী কম থাকায় চালকেরা জায়গায় জায়গায় দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রাখছেন। ফলে গন্তব্যে পৌঁছাতে ভোগান্তি হচ্ছে।

ফার্মগেটে রিকশাচালক মিন্টু হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল) অনেক ভাড়া পাচ্ছি। দূরের যাত্রীও তুলছি। গলিপথ দিয়ে কৌশলে পার হয়ে যাচ্ছি, কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

বাসচালকেরা বলছেন, রাজধানীতে যাত্রীর সংকটের কারণে এখন গাড়িগুলো প্রায় ফাঁকাই চলছে। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে এখন যাত্রী না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও সিট পূর্ণ হচ্ছে না। মিরপুর থেকে মতিঝিলÑ এসব ব্যস্ত রুটে প্রতিদিন বাসগুলো যাত্রীতে ঠাসা থাকলেও ছুটির প্রভাবে এখন বাসগুলোতে হাতে গোনা যাত্রী। ফলে নির্ধারিত ভাড়া ওঠানোই কঠিন হয়ে পড়ছে।

শাহবাগ মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছুটির প্রভাবে রাজধানীর যান চলাচল ব্যাপকভাবে কমে গেছে। সাধারণ সময়ে যেখানে সকাল থেকে রাত অবধি শাহবাগ মোড়সহ আশপাশের এলাকায় প্রচ- যানজট লেগে থাকে, সেখানে বুধবার সকাল থেকে পুরো চিত্রই ভিন্ন। গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ে অসংখ্য গাড়ি, রিকশা, বাস ও পথচারীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। কিন্তু টানা চার দিনের ছুটির প্রভাবে সেই চিরচেনা ভিড় ও কোলাহল নেই। ফলে দায়িত্ব পালনে কিছুটা স্বস্তি মিলছে।

ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের এডিসি তানিয়া সুলতানা বলেন, ‘পূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে আজ (গতকাল) সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কমেছে। ফলে সিগন্যালগুলোয় কোনো চাপ নেই। ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, তবে সড়ক ফাঁকা থাকায় অনেকেই গলি দিয়ে ঢুকে পড়ছে।’