ঢাকা শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫

সাক্ষাৎকারে বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপি ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী  কিন্তু ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে না

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৫, ১২:৩৮ এএম

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জামান দুদু। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা, পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন দলের চাওয়া, একসময়ের জোট সঙ্গী জামায়াতের সঙ্গে বর্তমান সম্পর্কসহ তার নির্বাচনি এলাকা চুয়াডাঙ্গার উন্নয়ন নিয়ে রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক এফ এ শাহেদ

রূপালী বাংলাদেশ: গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন দেখছেন?

শামসুজ্জামান দুদু: বিগত প্রায় ১৬ বছর ধরে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ওপর মামলা-হামলা ও নির্যাতন হয়েছে। লম্বা সময় ধরে আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করছে বিএনপিসহ মুক্তিকামী জনগণ। ফ্যাস্টিদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চূড়ান্ত রূপ ছিল ২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থান। যার মাধ্যমে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের অবসান হয়। দেশে সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক প্রেক্ষাপট। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের সর্বস্তরের জনগণ গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার আকাক্সক্ষায় উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছিল। তবে সময়ের পরিবর্তনে নানা ঘটন-অঘটনে সেই আকাক্সক্ষা কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে। অভ্যুত্থানের পর যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল, এক বছর পর এসে তা কিছুটা হলেও কমেছে। সাধারণ মানুষ দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রত্যাশা করেছিল। তা বিঘিœত হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পার হলেও অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে পারেনি। 

রূপালী বাংলাদেশ : নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে একসময়ের মিত্র রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কে ফাটল দেখা যাচ্ছে...  

শামসুজ্জামান দুদু: বিএনপির সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পর্কের ফাটল বা বিভক্ত হয়নি। গত ১৫ বছর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ রাজপথের আন্দোলনে যারা একত্রে ছিল, সবার সঙ্গে দলের সম্পর্ক ভালো। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব দর্শন রয়েছে। প্রতিটি দল তার দর্শনের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। তবে আপনি বিএনপি এবং জামায়াতের বিষয়ে জানতে চাইলে বলতে পারি, বিএনপি উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী বিএনপি সব সময় উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রাজনীতি করে। ধর্মীয় মূল্যবোধে দলটি বিশ্বাসী, তবে অন্যদের মতো ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে না। আবারও বলি যেসব দলের নেতাকর্মীরা ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে নির্যাতিত হয়েছেন, জীবন দিয়েছেন, তাদের সঙ্গে সম্পর্কে বিভক্তির কোনো সুযোগ নেই বিএনপির। একই সঙ্গে সুষ্ঠু গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রথম থেকেই সমর্থন দিয়েছি। 

রূপালী বাংলাদেশ: জাতীয় নির্বাচনে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির যৌক্তিকতা কতটা বলে মনে করেন। দেশের মানুষ আসলেও এমন কিছু চাইছে কী না? 

শামসুজ্জামান দুদু: পিআর পদ্ধতি আমাদের সংবিধানে নেই। এ পদ্ধতি আরওপিতেও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) নেই। ফলে দেশের প্রচলিত যে পদ্ধতি আছে, সে পদ্ধতিতেই আগামী নির্বাচন হবে। পিআর নিয়ে কয়েকটি দল যে আলোচনা করছে এটি রাজনৈতিক স্ট্যান্ড ছাড়া কিছুই নয়। কোনো বিশেষ মহল মনে করতে পারে, নির্বাচন হলে তাদের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন না বা ভবিষ্যৎ নেই। এ জন্যই তারা মুখরোচক কথাবার্তা বলছেন। ফলে তারা পিআরসহ নতুন নতুন দাবি তুলে নির্বাচনকে প্রলম্বিত করতে চাইছে। কিন্তু এসব করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।  

রূপালী বাংলাদেশ: আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কোন সংশয় দেখেন কি?

শামসুজ্জামান দুদু: সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ এবং সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচন ছাড়া এই দেশে ক্ষমতার পালাবদলের কোনো গ্রহণযোগ্য পথ নেই। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। একই সঙ্গে বলতে চাই সংবিধানে যে বিষয় নেই তা নিয়ে আলোচনা করাই উচিত নয়। যারা তা করছে সেটি সংবিধানের বিরুদ্ধে কথা বলছে। জনগণ যাদের পছন্দ করবে ভোটের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় আনবেন। তাদের ওপর কিছু চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। জনগণ পিআর পদ্ধতি চায় না। যদি কেউ মনে করে, জনগণের উপরে নির্বাচন ছাড়াই কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া যাবে, তাহলে তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। গণতন্ত্রে জনগণের মতামতই চূড়ান্ত।

রূপালী বাংলাদেশ: দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে আওয়ামী লীগ ফিরে আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। 

শামসুজ্জামান দুদু: আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছে তা এককথায় নজিরবিহীন। একই সঙ্গে গত সাড়ে ১৫ বছরে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুন, নির্যাতন, কার্যালয়ে হামলা, গ্রেপ্তার এবং মামলার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে তা ক্ষমার অযোগ্য এবং ন্যক্কারজনক। এসব অপকর্মের জন্য কোনো ধরনের অনুশোচনা তাদেও ভেতর জনগণ দেখেনি। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট খুনি দল আওয়ামী লীগ কিংবা এর শীর্ষনেতারা এখন পর্যন্ত ক্ষমা চায়নি, তারা অনুতপ্তও নয়। ফলে তাদের যেকোনো পরিস্থিতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। জনগণ তাদের ফিরে আসতে দেবে না।

রূপালী বাংলাদেশ: আপনার নির্বাচনি এলাকা চুয়াডাঙ্গা এবং দেশের উন্নয়নে কি স্বপ্ন দেখেন?

শামসুজ্জামান দুদু: দেশের প্রতিটি এলাকায় কিছু সমস্যা রয়েছে। পাশাপাশি সময়ের পালাবদলের সঙ্গেও নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয়। আমার নির্বাচনি এলাকা চুয়াডাঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। এ অঞ্চল মূলত কৃষিপ্রধান। এখানে কৃষির যথার্থ উন্নয়ন হয়নি। একই সঙ্গে শিক্ষা উন্নতি ও শিল্পের প্রসারও ঘটেনি। চুয়াডাঙ্গায় প্রকৃতপক্ষে শিল্পাঞ্চল নেই বললেই চলে। কৃষি ক্ষেত্রে এখনও সংকট বিদ্যমান। আগামীতে নিশ্চয় নির্বাচিত সরকার এই অঞ্চলের আধুনিকায়ন এবং সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আমার অনুভূতি এবং আবেগের সঙ্গে মিশে আছে চুয়াডঙ্গা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। এটি ছিল অন্যতম একটি প্রতিরোধ ও সংগ্রামের কেন্দ্র। যার সঙ্গে সবার আবেগ জড়িত। তবে সেটি এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ইহিহাস ঐতিহ্যে ঘেরা এই অঞ্চল ছিল রবীন্দ্রনাথের চারণভূমি। সার্বিক দিক থেকে এই অঞ্চলের মানুষের যা প্রাপ্তি ছিল তা পায়নি। আগামীতে নির্বাচিত সরকার সেটি নিশ্চিত করবে বলে আশা রাখি।

রূপালী বাংলাদেশ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

শামসুজ্জামান দুদু: আপনাকে এবং রূপালী বাংলাদেশকেও ধন্যবাদ।