ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২৫, ১১:৪২ পিএম

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী রুকমীলা জামান, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা করে দুদক। গতকাল বৃহস্পতিবার সংস্থাটির ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক মশিউর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলার এজাহার অনুযায়ী, ইউসিবি পিএলসির চট্টগ্রামের পোর্ট শাখা থেকে কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই কাগুজে প্রতিষ্ঠান ‘ভিশন ট্রেডিং’য়ের নামে ২৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। শাখাটির তৎকালীন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা একরাম উল্লাহ এবং শাখা প্রধান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ চৌধুরী প্রতিষ্ঠানটির হিসাব চালু করেন।
ঋণ আবেদনের পর শাখার ক্রেডিট কমিটি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুপারিশ করে, যা পরে করপোরেট অফিসের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়। যদিও ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটি প্রস্তাবটির সঙ্গে ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ যুক্ত করে পরিচালনা পর্ষদে পাঠায়। তা সত্ত্বেও ৪৪৮তম পর্ষদ সভায় ঋণটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

তদন্তে দুদক জানতে পেরেছে, ‘ভিশন ট্রেডিং’ নামে বাস্তবে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এটি আরামিট গ্রুপের স্বত্বাধিকারী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর একজন কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে বানানো কাগুজে প্রতিষ্ঠান। অনুমোদিত অর্থ পরে আলফা ট্রেডিং, ক্লাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিংয়ের মতো কয়েকটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়Ñ যেগুলোও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কর্মচারীদের নামে নিবন্ধিত।

এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে ভিশন ট্রেডিং, আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামে পাঁচটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খোলেন। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ইউসিবিএল ব্যাংকে আলাদা-আলাদা হিসাব খোলা হয় এবং ২৫ কোটি টাকা চারটি ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে তা পাচার করা হয়। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪২০, ৪৭১ ও ১০৯ ধারার পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে।

এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেনÑ সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (৫৬), তার স্ত্রী ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান, জাবেদের ভাই ও সাবেক পরিচালক আসিফুজ্জামান চৌধুরী, বোন রোকসানা জামান চৌধুরী, সাবেক পরিচালক বশির আহমেদ, আফরোজা জামান, সৈয়দ কামরুজ্জামান, মো. শাহ আলম, মো. জোনাইদ শফিক, অপরূপ চৌধুরী, তৌহিদ সিপার রফিকুজ্জামান, ইউনুছ আহমদ, হাজী আবু কালাম, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সবুর, সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী, সাবেক কর্মকর্তা একরাম উল্লাহ, আবদুল হামিদ চৌধুরী, আবদুর রউফ চৌধুরী, জিয়াউল করিম খান, মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, মীর মেসবাহ উদ্দীন হোসাইন, বজল আহমেদ বাবুল এবং আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরমান উল্লাহ চৌধুরী, কাজী মোহাম্মদ দিলদার আলম, মোহাম্মদ মিছবাহুল আলম, আব্দুল আজিজ, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মেহাম্মদ হোছাইন চৌধুরী, ইয়াছিনুর রহমান, ইউছুফ চৌধুরী ও সাইফুল ইসলাম।

এর আগে ২০২৪ সালের ১৭ এপ্রিল ২০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে সাইফুজ্জামান, তার স্ত্রীসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সে বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি, যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি এবং অন্যান্য দেশে সাইফুজ্জামান ও রুকমীলা জামানের নামে থাকা সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ দেন আদালত।

গত ৫ মার্চ সাবেক মন্ত্রী ও তার পরিবারের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়, যেখানে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা জমা ছিল। আদালতের অন্য এক আদেশে ১০২ কোটি টাকার শেয়ার ও ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর আদালত তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও জারি করেন।