বাংলাদেশে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ মেরুরজ্জুর আঘাতে (স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি) আক্রান্ত হলেও সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এখনো পুনর্বাসনসেবার সুনির্দিষ্ট কাঠামো নেই। প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনÑ প্রতিটি ধাপে ঘাটতি স্পষ্ট। বিশেষত এমআরআই ও সিটিস্ক্যানের মতো নির্ণয় সুবিধা প্রধানত বিভাগীয় হাসপাতালেই সীমাবদ্ধ। সেই সঙ্গে দেশে প্রশিক্ষিত পুনর্বাসন পেশাজীবীরও অভাব রয়েছে। পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসনকেন্দ্র (সিআরপি) পরিচালিত এক জাতীয় গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা সিবিএম গ্লোবাল ডিজ্যাবিলিটি ইনক্লুসনের সহযোগিতায় পরিচালিত প্রকল্পের অধীনে ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান স্বাস্থ্যব্যবস্থায় মেরুরজ্জুর আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনসেবা অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক এ গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়, মেরুরজ্জুর আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনকে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩-এর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। একই সঙ্গে সরকারি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং পুনর্বাসন পেশাজীবী তৈরি ও অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি টেইলর। গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশন্স ইনস্টিটিউটের (বিএইচপিআই) রিহ্যাবিলিটেশন সায়েন্স বিভাগের লেকচারার পুনম ডি কস্তা। প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) মো. জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় সিআরপির পক্ষ থেকে প্রধান অতিথির কাছে জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থায় মেরুরজ্জুর আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশপত্র হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জাহাঙ্গীর বলেন, ধীরে ধীরে মেরুরজ্জুর আঘাতও সরকারি স্বাস্থ্যসেবার অন্তর্ভুক্ত হবে। তিনি সাভারে সিআরপির বিশেষায়িত হাসপাতাল পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশে এমন একটি পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান আছে দেখে তিনি গর্বিত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের ফিজিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, আমাদের বাসার পরিবেশের চেয়ে হাসপাতালের পরিবেশ ভালো হতে হবে। পুনর্বাসনসেবা মেরুরজ্জুর আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সুবিধা নয়, বরং এটি তাদের অধিকার। সিবিএম গ্লোবাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান জানান, মেরুরজ্জুর আঘাতপ্রাপ্তদের পুনর্বাসনে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ গবেষণা ভবিষ্যতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, মেরুরজ্জুর আঘাতপ্রাপ্তদের পুনর্বাসনে ইন্টারডিসিপ্লিনারি দলের ভূমিকা অপরিহার্য। তিনি সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক বিএসএমএমইউ) ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক তসলিম উদ্দিন, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) সহযোগী অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলাম, অর্থোপেডিকস ও স্পাইন সার্জন মো. ফজলুল হক এবং বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশন্স ইনস্টিটিউটের (বিএইচপিআই) সাবেক অধ্যক্ষ ওমর আলি সরকার।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন