ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫

‘৩৬ জুলাই সেতু’র নামফলক ভাঙচুর ঘটনায় মামলা

বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৫, ০১:১৯ এএম

* দুই গ্রামের ৩ শতাধিক বাসিন্দা অভিযুক্ত

বরিশালের মুলাদীর আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর নির্মিত সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় তিন শতাধিক লোকজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়েছে। দুদিন বিলম্বে গত সোমবার রাতে মুলাদী থানায় মামলাটি করেছেন সেতুর নির্মাণশ্রমিক মেহেদী হাসান মৃধা। তবে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, গত ৬ ডিসেম্বর সকালে বরিশাল জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ওসির সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটলেও মামলায় অভিযুক্ত কারো নাম উল্লেখ করতে পারেননি বাদী। 

এর আগে গত শনিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের উপস্থিতিতে অনলাইনে যুক্ত হয়ে সেতু উদ্বোধনের কথা ছিল উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার। ওই দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরিশালের ডিসি মো. খায়রুল আলম সুমন, ইউএনও মো. গোলাম সরওয়ার এবং মুলাদী থানার ওসি (তৎকালীন) মো. সফিকুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অন্য কর্মকর্তা আসার আগেই সকাল ১০টার দিকে নাজিরপুর ও রামারপোল গ্রামের তিন শতাধিক লোক সেতুর পূর্বপাড় থেকে মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানে হামলা চালায়। হামলাকারীরা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ভেঙে ফেলেন এবং উপস্থিত কর্মকর্তাদের সামনেই সভামঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করে লালগালিচা নিয়ে যান। এতে অনুষ্ঠান প- হয়ে যায়।

বরিশাল জেলা-উপজেলার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার সম্মুখে ‘৩৬ জুলাই সেতু’ উদ্বোধনী আয়োজনে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয় এবং এ নিয়ে সংবাদপত্রগুলো মোটাদাগে শিরোনাম করে। আলোচিত এই ঘটনাকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশের দায়িত্ব পালনে দুর্বলতার চিত্র ফুঠে ওঠে। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনে মুলাদী থানা পুলিশের ওসি আরাফাত জাহান চৌধুরী বলছেন, দুই গ্রামবাসীর অতর্কিত হামলা প্রতিরোধ করতে গেলে প্রাণহানির ঝুঁকি ছিল। তা ছাড়া জেলা প্রশাসক বা ইউএনও কারো তরফ থেকে পুলিশকে অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশনা ছিল না। বরং তাদের পক্ষ থেকে সংঘাত এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছিল, পুলিশ করেছেও তাই। এখন ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আসামিরা গ্রেপ্তার হবেন। তবে ঘটনাটি দুদিন তদন্তের পরেও কেন কোনো অভিযুক্তকে শনাক্ত করা গেল না এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, বাদী কাউকে চিহ্নিত করে নাম দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। পরবর্তীতে পুলিশের তদন্তে অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় পাওয়া যাবে।

সূত্রে জানা গেছে, মুলাদীর আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ৬১৯ মিটার দৈর্ঘ্যরে ব্রিজটি প্রথমে ‘সৌহার্দ্য সেতু’ হিসেবে নামকরণ হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে তার নাম বদলে করা হয় ‘৩৬ জুলাই সেতু’। তা ছাড়া এই সেতু নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা রেখে প্রশংসিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এমদাদুল হক মজনুকেও গত ৬ ডিসেম্বর উদ্বোধনী আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এসব ঘটনায় সংক্ষুব্ধ পাশর্^বর্তী দুটি গ্রামের মানুষ খোদ বরিশাল জেলা প্রশাসক, ইউএনও এবং পুলিশের ওসির সম্মুখে তাদের ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে হামলা চালিয়ে উদ্বোধনী মঞ্চ ভাঙচুর করাসহ সেতুর নামফলক গুঁড়িয়ে দেন।’

বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ঘটনাটিতে মামলা হয়েছে, আসামিরাও গ্রেপ্তার হবে। মাঠপুলিশকে সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে সেদিনের ঘটনায় পুলিশের কর্তব্যে অবহেলা রয়েছে কী না তাও তদন্ত করা হচ্ছে।’