সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০২:০১ এএম

মানব পাচার বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০২:০১ এএম

মানব পাচার বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

বাংলাদেশের নানা প্রান্তের তরুণদের মনে প্রতিদিনই জেগে ওঠে ইউরোপ যাওয়ার এক মরীচিকার স্বপ্ন। দারিদ্র্য, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা ও আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে একটু ভালো থাকার আশায় বহু তরুণ পাড়ি জমাতে চান ইউরোপ। কিন্তু এই স্বপ্নকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে ভয়ংকর মানব পাচার চক্র, যারা উন্নত জীবনের লোভ দেখিয়ে মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার গহ্বরে। যার নাম ক্যাসিনো বন্দিত্ব।

কুয়েত, দুবাই, তুরস্ক, এমনকি সার্বিয়া হয়ে ইউরোপে যাওয়ার নাম করে বাংলাদেশি যুবকদের পাচার করা হচ্ছে। তাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ‘ওয়ার্ক পারমিট’ অথবা রাজনৈতিক আশ্রয়ের সুবিধায় ইতালি বা ফ্রান্সে পৌঁছে দেওয়ার। অথচ বাস্তবে তাদের গন্তব্য হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশ, বিশেষ করে লাওস, মিয়ানমার বা কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চল। যেখানে অবৈধ ক্যাসিনোগুলো চলছে একাধিক সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায়।

এই ক্যাসিনোগুলোতে পৌঁছানোর পর তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। বলা হয়, ইউরোপ যেতে হলে ‘কিছু কাজ’ করতে হবে। শুরু হয় আধা-দাসত্বের জীবন। কাউকে বাধ্য করা হয় ফোনকলের মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থ পাঠাতে, কাউকে দিয়ে চালানো হয় অনলাইন জুয়া বা ‘স্ক্যাম অপারেশন’। কেউ কেউ সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুর কাছাকাছিও পৌঁছে যায়। পালানোর চেষ্টা করলে হয় গুম, নয়তো করা হয় হত্যা। অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন অবর্ণনীয় মানসিক যন্ত্রণার কারণে।

রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসছে এমন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতারণার কৌশল হিসেবে প্রথমে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ‘ওয়ার্ক পারমিট’, ‘কম খরচে ইউরোপ ভিসা’ অথবা ‘মালয়েশিয়া ট্রানজিটে ইউরোপ’- এমন লোভনীয় প্রতিশ্রুতি দিয়ে টার্গেট করা হয় বাংলাদেশি তরুণদের। ভুয়া কাগজপত্রে তাদের পাঠানো হয় মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, কিংবা লাওসে। সেখান থেকে পাচারের মাধ্যমে পাঠানো হয় কম্বোডিয়ায়। ভিসা হাতে পেতে দেরি হবে এমন অজুহাতে চাকরি দেওয়া হয় ক্যাসিনোতে। কিন্তু আদতে তাদের বিক্রি করা হয় ক্যাসিনোয়। সেখানে নিয়ে তাদের ওপর চলে নির্যাতন, করা হয় মুক্তিপণ দাবি। নতুবা শুধু থাকা-খাওয়ার বিপরীতে ক্যাসিনোতে কাজ করতে বাধ্য করা হয়।  

ইউরোপের স্বপ্ন দেখিয়ে বাংলাদেশি তরুণদের কম্বোডিয়ায় পাচার করছে একাধিক শক্তিশালী আন্তর্জাতিক চক্র; যার একটির নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশি মাসুম রেজা মাসুদ। তবে মাসুম শুধু একা নন, তার সহযোগীরা এই প্রতারণার অর্থনৈতিক কাঠামো চালাচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। যার প্রমাণ মিলেছে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে। মাসুম রেজার সিন্ডিকেটে রয়েছেন আরেক বাংলাদেশি আব্দুল হালিম। ৬০ বছর বয়সি হালিম এক সময় বাংলাদেশে ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করতেন। বর্তমানে কম্বোডিয়ার নমপেনে মাসুম রেজার প্রতিবেশী। দুজনের নেতৃত্বে চলে এই সিন্ডিকেট। পাশাপাশি বাংলাদেশে তাদের রয়েছে একাধিক দালাল চক্র। ইউরোপে লোক পাঠানোর জাল ডকুমেন্ট তৈরি করে বাংলাদেশি তরুণদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলছেন তারা।

এই ভয়ংকর মানব পাচার চক্র শুধু মানুষের জীবন ধ্বংস করছে না, দেশের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই চক্রগুলো কীভাবে সক্রিয় থাকছে? তাদের প্রাথমিক দালালরা দেশের মফস্বল শহর ও গ্রাম থেকে মানুষ সংগ্রহ করছে নির্বিঘেœ। বিমানবন্দর পার হওয়া, পাসপোর্ট তৈরি, ট্রানজিট ভিসা ইত্যাদি কোথাও যেন তেমন কোনো বাধা পড়ছে না, যা স্পষ্ট করে দেয় প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজ অংশ এতে জড়িত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চক্র কীভাবে এত বড় পরিসরে কার্যক্রম চালাচ্ছে? বিমানবন্দর থেকে শুরু করে অভিবাসন দপ্তর পর্যন্ত সর্বত্র যদি নজরদারি যথাযথ থাকত, তবে এই দুষ্টু চক্র এতটা বিস্তৃত হতে পারত না। এটা স্পষ্ট যে, প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি এবং দুর্বল আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাই এদের সাহস জুগিয়েছে।

সরকারের দায়িত্ব শুধু এই পাচার হওয়া মানুষগুলো ফিরিয়ে আনা নয়; বরং পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করাও জরুরি। পাশাপাশি সচেতনতামূলক প্রচার বাড়াতে হবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে ইউরোপ মানেই স্বর্গীয় জীবনের প্রতিশ্রুতি বলে ভাবা হয়।

আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সরকারের এই বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্বসহকারে দেখবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাসহ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গ্রহণ করে পাচার হওয়া মানুষদের উদ্ধার করবে। সেই সঙ্গে যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কঠোর বিচার নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করে দেশের তরুণদের বোঝাতে হবে অবৈধ পথে ইউরোপের স্বপ্ন কেবল অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়।

আমরা মনে করি,  উন্নত জীবনের স্বপ্ন প্রত্যেক মানুষের অধিকার। কিন্তু সে স্বপ্ন যদি প্রতারণা, দাসত্ব আর মৃত্যুতে গিয়ে ঠেকে, তবে তা নির্মম এক ট্র্যাজেডি। দেশের তরুণেরা যাতে আর দুঃস্বপ্নে ডুবে না যায়, তার জন্য এখনই সময় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার।  

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!