‘ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লিতে, এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’শরৎচন্দ্রে চট্টোপাধ্যায়ের কথাটি বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
বাংলাদেশে প্রায় ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু এর অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই শুধু নামমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু এগুলোর সুযোগ সুবিধা বিশ্ববিদ্যালয় কেন অনেক কলেজ থেকেও কম। তা ছাড়া, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসও নেই, ক্লাস রুমের সংকট, হল তো আরও দূরের কথা। কিন্তু ঢাবি’তে বছরের পর বছর বাজেট বেড়েই চলছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ২০ বছরে একটা ক্যাম্পাস হয় নাই, ছেলেদের জন্য কোনো হল হয় নাই, তার বিপরীতে ঢাবি’তে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ভবন।
প্রতিবছর বাড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ফলে আবাসিক হলগুলোয় স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে ৯টি আবাসিক হল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রদের জন্য ৫টি, ছাত্রীদের জন্য ৪টি। এতে
পাশাপাশি শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, গ্রন্থাগার উন্নয়ন, খেলার মাঠের উন্নয়ন, ডাকসু ভবন নির্মাণ ও অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে। সব মিলে ২ হাজার ৮৪১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।
অথচ দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই মৌলিক কোনো সংস্কার। যেমন- অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ বছর হওয়ার পরেও শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদাগুলোও পূরণ করছে না। কিন্তু যখন বাজেট দেওয়া হয়, তখন ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাজেট হয় না। দেখা যায় চরম অবমূল্যায়ন।
বাংলাদেশের সমসাময়িক বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা দেশের জন্য ক্ষতিকর। দেশের বাজেটের দিকে খেয়াল রেখেই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিতে না পারলে, সে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে লাভই বা কি হবে?
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুণগত মানসম্পন্ন গবেষণা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য, একজন শিক্ষার্থীকে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠার জন্য এবং দেশীয় মেধা পাচার রোধ করার জন্য বাজেট সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে। সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাজেট দিতে হবে। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।