ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

দুয়ারি জালে বিলুপ্তির পথে দেশীয় মাছ

মৌসুমী দাস, চারঘাট (রাজশাহী)
প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৫, ১২:২৫ এএম

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন নদী ও খালে কারেন্ট জালের চেয়েও ভয়ঙ্কর ‘চায়না দুয়ারি’ জাল দিয়ে দেশীয় মাছ নিধন করছে একদল জেলে। ক্ষতিকর এই জালে শুধু পোনা নয়, ধরা পড়ছে মাছের ডিম, রেণু এবং অন্যান্য জলজপ্রাণীও। এতে দেশীয় মাছের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

উপজেলার পুঠিমারী সেতু এলাকায় বড়াল নদে ছোট-বড় অসংখ্য নৌকায় করে চায়না দুয়ারি জাল ফেলছেন জেলেরা। মিহি এ জালে ধরা পড়ছে ছোট-বড় মাছের সঙ্গে এমনকি ছেঁকে উঠছে মাছের ডিমও। মাছ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা জেলেরা।

কথা হয় তালিকাভুক্ত জেলে খাইরুল ইসলামের সঙ্গে। হাসিমুখে এই জেলে বলেন, এই ফাঁদে মাছ ধরতে পরিশ্রম করতে হয় না। এ কারণে মৌসুমের শুরুতেই জাল পেতেছি। আর কোনো কাজ নেই। প্রতিদিন ৮-১০ বার ফাঁদের শেষ মাথায় তুলে মাছ সংগ্রহ করি। সব ধরনের মাছই আটকা পড়ে। এ জাল পাতলে কখনো নিরাশ হতে হয় না।
পুঠিমারী সেতু এলাকা ছাড়াও এ দৃশ্যের দেখা মেলে পদ্মাপাড়ের ইউসুফপুর, মুক্তারপুর, গোপালপুর, পিরোজপুর ও রাওথা এলাকা এবং বড়ালের উৎস মুখ ও আড়ানী সেতু এলাকায়। শত শত ছোট ডিঙি নৌকা ও বড় নৌকা নদীর তীরের দিকে নোঙর করে রেখেছেন জেলেরা। খোঁজ নিতেই জানা গেল, তারা মাছের বংশ ধ্বংসকারী ‘চায়না দুয়ারি’ নামের ফাঁদ ফেলে বসে আছেন। তাদের মধ্যে তালিকাভুক্ত জেলেরাও আছেন। 

বর্ষার শুরুতে পদ্মা থেকে বড়াল নদের মাধ্যমে চলনবিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এখন মাছ কমে গেছে এর জন্য নদ-নদীতে পানি না থাকার পাশাপাশি অবৈধ জালকে দায়ী করছেন জেলেরা।

মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চারঘাটে পদ্মা ও বড়ালের ৭৬৭ হেক্টর জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির মিঠাপানির দেশি মাছ ও প্রাকৃতিক জলজপ্রাণীর অভয়ারণ্য রয়েছে। তা থেকে প্রতি বছর ১ হাজার ৯৭৫ টন দেশি মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে, যা পুরো রাজশাহীর দেশীয় মাছের অন্যতম জোগানদাতা। মৎস্য বিভাগ আইন করে ২০২১ সালে ক্ষতিকর দুয়ারি জাল বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধও করেছে।  প্রকাশ্যে এ জাল বিক্রি ও মাছ ধরা হলেও জনবল সংকটের অজুহাতে মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে কোনো অভিযান বা কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
মুক্তারপুর এলাকার পদ্মাপাড়ের জেলে রবিউল ইসলাম বলেন, এই জালে মাছের পোনা, রেণু, জাটকাসহ সব আটকে যায়। জলজপ্রাণী, এমনকি ছেঁকে উঠছে মাছের ডিমও। আমরা যারা বাঁশ-বেতের তৈরি সরঞ্জাম দিয়ে মাছ ধরি, তারা নদীতে যাওয়া বন্ধ করেছি। 

চন্দনশহর মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আলতাফ হোসেন জানান, উপজেলায় কার্ডধারী জেলের সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৪ জন। তাদের মধ্যে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করা জেলের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। প্রথম কয়েকজন জেলে এই ফাঁদ ব্যবহার শুরু করেন। এতে অন্য জেলেরা দীর্ঘ সময় জাল ফেলেও মাছ পান না। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ এর ব্যবহার শুরু করেন। 

চারঘাট উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, জনবল সংকটের কারণে অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নদীতে অভিযান শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।