ঢাকা রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

ভেঙে গেল কাটাখালী বাঁধ

বাড়ি-জমি হারানোর শঙ্কায় মানুষ

নাজমুল হুদা নয়ন, শেরপুর
প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ১২:৪১ এএম

বগুড়ার শেরপুরে সুঘাট ইউনিয়নের চককল্যাণী এলাকার কাটাখালী বাঁধ ভেঙে গেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাঁধ ভেঙে আশপাশের এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙা অংশে পানিপ্রবাহের চাপ এতই বেশি যে, ইতিমধ্যে বাঁধের দুই পাশের রাস্তা ও দোকানপাট ভেসে গেছে। এদিকে আবাদি জমি ও বাড়িঘর হারানোর শঙ্কায় রয়েছে ওই এলাকার মানুষ। দ্রুত বাঁধের পুনর্নির্মাণের জন্য প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। 
স্থানীয় লোকজন জানান, ৫০ থেকে ৫৫ বছর আগে বাঙ্গালী নদীর দক্ষিণ পাশে এই বাঁধ দেওয়া হয়। বাঁধের এক পাশে ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘর রয়েছে। বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় চককল্যাণীসহ আশপাশের গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, বাঙ্গালী নদীর কারণে আগে প্রতি বছর বন্যা হতো, ফলে নদীর পানি কাটাখালী খাল দিয়ে প্রবেশ করে বিলজয় সাগর, জয়লা, আওলাকান্দি, জালশুকা, কইগাতী, যুগিগাতি, রুদ্রবাড়িয়াসহ আশপাশের সব এলাকায় পানি ঢোকার কারণে কৃষকেরা জমিতে চাষাবাদ করতে পারতেন না। এ কারণে প্রায় ৫৫ বছর আগে চককল্যাণী গ্রামে প্রায় ১০০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তবে ২০ বছর না যেতেই বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়ে ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষ। পরে সরকারি সহায়তায় চককল্যাণী গ্রামে একটা বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

ওই বাঁধের ওপর দিয়ে আশপাশের গ্রামের মানুষ চলাচল করতেন। বাঁধের দক্ষিণ পাশে ফসলি জমি যাতে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধ না হয়, এ জন্য মাঝখানে প্লাস্টিকের পাইপ দেওয়া ছিল। চলতি মাসে ভারী বৃষ্টির কারণে ফসলি জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এই পানি বাঁধের নিচে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে যাওয়ার সময় গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাঁধটি ধসে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে পানির চাপে প্রায় ৫০ ফুট বাঁধ বিলীন হয়ে যায়। এতে বাঁধের দুই অংশের রাস্তা ভেঙে দোকানপাট পানিতে ভেসে যায়।

এই অবস্থা খালের ভাটিতে থাকা আবাদি জমি ও বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। খুব দ্রুত বাঁধটি পুনঃনির্মাণ করার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী। 

চককল্যাণী গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, পানির চাপে বাঁধের সড়কের পাশে লাগিয়ে রাখা বিভিন্ন ধরনের বড় বড় গাছ ভেসে গেছে। বাঁধের দুই পাড়ে অন্তত ১০ বিঘা জমিতে ধস দেখা গেছে। এসব জমিতে চলতি মৌসুমের সবজি চাষ করা হয়েছিল। আরেক কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসন এই বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ না নিলে এলাকার কৃষকেরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়বেন।

আবুল কাশেম নামের এক দোকান মালিক বলেন, বাঁধটির পাশেই ছিল তার দোকান। দোকানের কিছু অংশ সরাতে পারলেও নিমেষের মধ্যে দোকানের মাটিসহ ধসে পড়ে। পানির স্রোতে ভেসে যায় দোকানটি।

ভাঙন এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, কাটাখালী বাঁধে একটি স্লুইসগেট নির্মাণের জন্য বেশ কিছুদিন আগে আমরা মানববন্ধন করেছিলাম। এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও বিষয়টি অবগত করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়Ñ এখনো তার কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না করলে আরও ফসলি জমি ও আমাদের বাড়ি-ঘর ভাঙনের কবলে পড়বে। এ কারণে সমস্যা দ্রুত সমাধান করে স্বাভাবিক চলাচল ও নির্বিঘেœ বসবাসের ব্যবস্থা করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নূরনবী হিটলার বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর আমরা উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশিক খান বলেন, কাটাখালীর বাঁধ ভাঙনের খবর পেয়েছি, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে, যেন দ্রুত সব কিছুর ব্যবস্থা করা হয়।