সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০২:১৬ এএম

৫ কোটি টাকার সড়কটি ভেসে গেল সমুদ্রে

কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০২:১৬ এএম

৫ কোটি টাকার সড়কটি  ভেসে গেল সমুদ্রে

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পাশে সৌন্দর্য বর্ধন ও পর্যটকদের চলাচলের সুবিধার্থে নির্মিতব্য ‘সেকত সড়ক’ (মেরিন ড্রাইভ) উদ্বোধনের আগেই ধসে পড়েছে সাগরে। ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পটির অধিকাংশ অংশই গত ২৯ মে ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। সমুদ্রের ভাঙনের তোড়ে বিলীন হয়ে যাওয়া এই প্রকল্প ঘিরে উঠেছে প্রশ্নের ঝড়, নি¤œমানের কাজ, স্বজনপ্রীতি ও পরিকল্পনার অভাব। নির্মাণ কাজের অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও আলোর মুখ দেখেনি দুই মাসেও।

জানা গেছে, ২০২৩- ২৪ অর্থবছরে সাগরকন্যাকে নতুন করে সাজানোর জন্য এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। কুয়াকাটা পৌরসভার আওতায় ১৩শ মিটার দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয় আইইউআইডিপি ফেস-২ এর অধীনে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স, মেসার্স আবরার ট্রেডার্স ও এস এম ট্রেডার্স কাজ পায়। ঠিকাদার সাদ্দাম মাল, বেল্লাল হোসেন, ছগির মোল্লা ছিলেন সাবেক মেয়রের ঘনিষ্ঠজন। ইতোমধ্যে প্রকল্পের বিপরীতে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী দ্বারা কাজ করে। নির্মাণকাজ শেষ না হতেই গত ২৯ মে ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে সৈকত সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ধসে পড়ে। এরপর নির্মাণ কাজের অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ও কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসীন সাদেককে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন উপজেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও দুই মাসে তা আলোর মুখ দেখেনি। সমুদ্র শাসন না করে নির্মাণকাজ করায় প্রকল্পটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হল।

গত কয়েকদিনের আমাবস্যার জো ও নি¤œচাপের প্রভাবে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সমুদ্রের ঢেউয়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এই ভাঙনে মেরিন ড্রাইভ ও পাশের সবুজ বেষ্টনীর প্রকল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, পুরো এলাকাটিই যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় টেকসই পরিকল্পনা এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ছাড়া কাজ করে জনগণের অর্থ অপচয় করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা গাজী হানিফ বলেন, ‘গাইড ওয়াল ছাড়া এমন ঝঁকিপূর্ণ এলাকায় রাস্তা নির্মাণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পরিকল্পনা ছাড়া সরকারের কোটি টাকার প্রকল্প এভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া উদ্বেগজনক।
কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, প্রতিবছর জিওব্যাগ দিয়ে একটি নাম মাত্র প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। যা সৈকত রক্ষায় কোনো কাজে আসছে না। কুয়াকাটায় রক্ষায় দরকার স্থায়ী বাঁধ। সমুদ্র শাসন না করে সৈকত সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ এক ধরনের বিলাসী প্রকল্প।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল বলেন, পরিকল্পনা ছাড়া সমুদ্র রক্ষার নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা নিছক বোকামি। নিজস্ব লোকজন দিয়ে প্রকল্পটাকে যারা চেটেপুটে খেয়েছেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।
সৈকত সড়কটি রক্ষার দাবিতে গত শনিবার সকালে ডিসি পার্ক সংলগ্ন বিধ্বস্ত সড়কটিতে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এতে কুয়াকাটার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় বক্তারা বলেন, অব্যাহতভাবে ভাঙনের ফলে সৈকতের সৌন্দর্য ও পরিবেশ ধ্বংস হওয়ায় পর্যটকদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে যা কুয়াকাটার পর্যটন অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি। দ্রুত সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নতকরণ, অবৈধ দখলমুক্তকরণ এবং ট্যুরিস্ট ফ্যাসিলিটিজ বৃদ্ধির দাবিতে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইট ও বালু দিয়ে নি¤œমানের কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ পৌর মেয়রের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের বিপরীতে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদার স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কাজ দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই।

কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ইয়াসীন সাদেক বলেন, ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্প। ইতোমধ্যেই ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। বাকি ৩ কোটি টাকা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করিয়ে নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ডিসি পার্ক থেকে জিরো পয়েন্ট এলাকা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার জায়গা রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কুয়াকাটা পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!