সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


তাপস মাহমুদ, বরগুনা

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০২:২৫ এএম

বনাঞ্চলে গাছ কাটার মহোৎসব

তাপস মাহমুদ, বরগুনা

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০২:২৫ এএম

বনাঞ্চলে গাছ কাটার মহোৎসব

বরগুনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলের সংরক্ষিত বনভূমিতে প্রতিদিনই চলছে গাছ কাটার উৎসব, দখলদারিত্ব এবং ভুয়া প্রকল্পের নামে বন উজাড়। বন বিভাগের চোখের সামনেই সহস্রাধিক গাছ কেটে তৈরি হচ্ছে কাঁচা রাস্তা, বসতবাড়ি, মাছের ঘের, কৃষি ও গবাদিপশুর খামার। পাশাপাশি গড়ে উঠছে অবৈধ করাতকল ও মাদক কারবারের রুট। এসব অনিয়মের সঙ্গে বন বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

২০১২ সালের করাতকল লাইসেন্স বিধিমালার আওতায় সংরক্ষিত বনভূমির ১০ কিলোমিটার এলাকায় করাতকল স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু বরগুনা জেলাতেই ২৫টির বেশি করাতকল রয়েছে সংরক্ষিত বন থেকে মাত্র ২০০-৩০০ গজের মধ্যে। বরগুনা-পটুয়াখালী অঞ্চলে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ৫০টি। অভিযোগ রয়েছে, এসব করাতকল থেকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের মাসোহারা নিচ্ছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

বরগুনা সদরের নলটোনা ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী কুমিরমারা বনভূমির ভেতর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ১৫ ফুট প্রশস্ত কাঁচা সড়ক। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের নামে একটি ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে এ রাস্তা নির্মাণ করা হয়। বন বিভাগের কোনো লিখিত আপত্তি না থাকায় বন উজাড়ের পথ সুগম হয়।

এক সাবেক ইউপি সদস্য বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদ করলেও কেউ শোনেনি। বন বিভাগ বরং প্রকল্প বাস্তবায়নকারীর কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছে বলেই শুনেছি।’

কুমিরমারা, গোড়াপদ্মা ও নিশানবাড়িয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বনভূমিতে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য মাছের ঘের, কৃষি প্রকল্প ও বসতবাড়ি। কুমিরমারা খালের পাশে দেখা গেছে এক্সকাভেটর দিয়ে কাটা সারি সারি ঘের, টিনের ঘরবাড়ি, গবাদিপশুর চারণভূমি। পাথরঘাটা, আমতলী, তালতলী এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলাজুড়ে দেখা যাচ্ছে একই চিত্র।

বন সংরক্ষণের জন্য চালু হওয়া ‘সুফল প্রকল্প’ বাস্তবায়নে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে অনিয়মিতভাবে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বিট কর্মকর্তা, রেঞ্জার, বনপ্রহরী এমনকি ডিএফওও।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’র পরিবেশকর্মী আরিফুর রহমান জানান, পাথরঘাটার লালদিয়ার চরে প্রতিদিন খুটা জালে আটকে মারা যাচ্ছে টনকে টন রেণু ও জলজপ্রাণী। বন বিভাগের সহায়তায় এ ব্যবসা চালু রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সুন্দরবন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ও টিআইবি-সনাক বরগুনা সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘আমরা বারবার প্রতিবাদ করেও বন ধ্বংস ঠেকাতে পারিনি। বন বিভাগ কখনোই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বরং তাদের উদাসীনতায় বনভূমিতে গবাদিপশুর চলাচল ও মাদক কারবারের নিরাপদ রুট তৈরি হয়েছে।’

অভিযোগ রয়েছে, বরগুনা অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জার আখতারুজ্জামান অবৈধ করাতকল, মাছের ঘের এবং বসতি দখলদারদের কাছ থেকে মাসোহারা নিচ্ছেন নিয়মিত। এমনকি দরিদ্র জেলেদের মাছ ধরার ট্রলার থেকেও অর্থ আদায় করা হচ্ছে।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, এভাবে বনভূমি উজাড় ও গাছ নিধনের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব আরও প্রকট হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে ঝুঁকি বাড়বে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং লবণাক্ততার।
এ বিষয়ে বরগুনা-পটুয়াখালী অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।      

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!