ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

ভাঙ্গুড়ায় ৫ সোনার দোকান ও ৩ বাড়ি লুট

ভাঙ্গুড় (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ০২:৩৮ এএম

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় পাঁচটি সোনার দোকান এবং তিন ব্যবসায়ীর বাড়ি লুট করেছে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদল। গত বুধবার গভীর রাতে উপজেলার অষ্টমনিষা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় প্রায় ২ কোটি টাকার স্বর্ণালংকার এবং নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

ডাকাতির সময় স্থানীয়দের ফোন করে সাহায্য চাওয়া হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি, এ নিয়ে এলাকায় চরম আতঙ্ক ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছে।

সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুসারে, ১০ থেকে ২৫ জনের একটি সশস্ত্র ডাকাতদল স্পিডবোটে করে গুমানি নদী দিয়ে বাজারে প্রবেশ করে। তারা প্রথমে বাজারের দুই নৈশপ্রহরীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেঁধে রাখে। এরপর দোকানের তালা ভেঙে সোনার দোকানগুলোতে লুটপাট শুরু করে এবং সংলগ্ন বাড়িঘরে প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের মারধর করে অর্থ-সম্পদ ছিনিয়ে নেয়। লুটপাটের পর ডাকাতরা ভোর সাড়ে ৪টার দিকে স্পিডবোটে করে নদীর ভাটির দিকে পালিয়ে যায়।

ভুক্তভোগীরা জানান, ডাকাতদের হাতে বন্দুক, ধারালো অস্ত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ছিল, যা তাদের প্রতিরোধ করা অসম্ভব করে তুলেছিল।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের ভাষ্য মতে, লুট হয়েছে অন্তত ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার এবং প্রায় ২ কোটি টাকার নগদ অর্থ। এর মধ্যে আফতাব জুয়েলার্সের নগদ ৪০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার, তপন জুয়েলার্সের নগদ ৪২ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার এবং রতন জুয়েলার্সের নগদ অর্থসহ ৪৫ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার লুট হয়েছে। এ ছাড়া উত্তম জুয়েলার্স, মধু জুয়েলার্স, মা জুয়েলার্স এবং আঁখি জুয়েলার্স থেকেও স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট হয়েছে, যা মোট লুটের পরিমাণকে বাড়িয়ে তুলেছে। এ সময় পরিবারের সদস্যদের মারধর করা হয়।

রতনের ছেলে রঞ্জন কর্মকার জানান, দুর্বৃত্তরা দোকানের তালা ভেঙে স্বর্ণ লুট করে, তারপর বাড়িতে ঢুকে আমার মা ও আমাকে মারধর করে ১০ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ ১৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়।

রতন কর্মকার বলেন, ডাকাতেরা বাড়িতে ঢুকলে আমি তিনতলায় গিয়ে প্রতিবেশীদের ফোন করার চেষ্টা করি, কিন্তু কেউ সাহায্য করতে আসেনি। পরে দীপকে ফোন করি, কিন্তু সে বের হতে পারেনি, কারণ তার ঘরের সামনে দুই অস্ত্রধারী দাঁড়িয়ে ছিল।

অন্য ভুক্তভোগীরাও একইভাবে স্থানীয়দের সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। পুলিশকে ফোন করার পরও তারা ১৫ মিনিট পরে পৌঁছায়, কিন্তু ততক্ষণে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার অষ্টমনিষা বাজার চলনবিলের ‘রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত, যেখানে স্বর্ণ ও ধান ব্যবসা প্রধান। এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা উপজেলার অন্যান্য এলাকার চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে, কিন্তু নদীপথের কারণে নিরাপত্তার ঝুঁকি বেশি। এই ডাকাতি ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের দাবি তুলেছেন এবং ভবিষ্যতে অনুরূপ ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভুক্তভোগীরা দ্রুত ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু বকর সিদ্দিক, পাবনা ডিবি পুলিশের ওসি রাশিদুল ইসলাম ও ভাঙ্গুড়া থানার ওসি শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ভাঙ্গুড়া থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসী চাইলে এ ঘটনা প্রতিহত করতে পারত। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। তবে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। খুব দ্রুততম সময়ে এই ডাকাতির রহস্য উদঘাটন করা হবে।