ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫

বাসিয়া নদী এখন ময়লার ভাগাড়

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, বিশ্বনাথ
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৫, ০১:৫৭ এএম

*** খর¯্রােতা নদী এখন দখলদারদের কবলে পড়ে প্রায় সংকুচিত
*** নদীর উভয় তীরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা
*** দোকানপাট ও বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনায় চারদিকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ
*** পৌরসভার নিষেধাজ্ঞায়ও থামছে না ময়লা ফেলা

সিলেটের বিশ্বনাথের ঐতিহ্যবাহী বাসিয়া নদী আজ পরিবেশ দূষণের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময়ের খর¯্রােতা এ নদী এখন দখলদারদের কবলে পড়ে সংকুচিত প্রায়। নদীর উভয় তীরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা। নদীর যে অংশটুকু এখনো অবশিষ্ট আছে, সে অংশটুকুকেও পরিণত করা হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। সেখানে প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে দোকানপাট ও বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা। ফেলা হচ্ছে পলিথিন-প্লাস্টিকও। নদীতে ফেলা ময়লা-আবর্জনা পচেগলে চারদিকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে এই দুর্গন্ধ দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যায়। যে কারণে পৌরশহরের মানুষজন, স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রী ও বাজারে আসা ক্রেতা-সাধারণের চলাচল অসহনীয় হয়ে ওঠে। এতে করে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরশহরের বাসিয়া নদীর অংশের উভয় তীরে রয়েছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। দুতীরজুড়েই ময়লা-আবর্জনায় ঠাসা। নদীর দিকে তাকালে মনে হয় মৃতপ্রায় একটি খাল যেন ময়লার ভাগাড় হিসেবে পড়ে রয়েছে।

জানা যায়, গত দুই বছর আগে নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশ্বনাথ পৌরসভা। তবে, বাস্তবে সেই নিষোজ্ঞা উপেক্ষিতই হয়ে আসছে। বাসিয়া নদীর বর্তমান পরিস্থিতি ভবিষ্যতে বড় ধরনের পরিবেশ ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন সচেতনমহল।

বিশ্বনাথ উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মার্চে উপজেলা কোর্ট পয়েন্ট হতে টিএন্ডটি মোড় পর্যন্ত বাসিয়া নদীর দুই তীরের সাড়ে মিটার অংশ পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু, নির্দিষ্ট জায়গায় নদীর ময়লা-আবর্জনা ডাম্পিং না করে নদী তীরে সেগুলো রেখে দেওয়ায় বৃষ্টির পানিতে ময়লা-আবর্জনা ফের নদীতে মিশে যায়।

বিশ্বনাথ পৌরশহরের ব্যবসায়ী আমিনুল বলেন, ‘বাসিয়া নদীর ময়লার দুর্গন্ধে ঠিকমতো ব্যবসা-বাণিজ্য চালানো দায় হয়ে পড়েছে। এ থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।’

বিশ্বনাথ বাজারে আসা নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন, ‘এমনিতেই দখলের কারণে সংকুচিত হয়ে পড়েছে বাসিয়া নদী। এরমধ্যে নদীভর্তি ময়লা-আবর্জনা এটিকে একেবারে শেষ করে দিচ্ছে।’

বিশ্বনাথের সংবাদকর্মী রফিকুল ইসলাম জুবায়ের বলেন, ‘বাসিয়া নদীর দুর্গন্ধ অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। যার ফলে তৈরি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। আমি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই, দ্রুত বাসিয়া নদীর ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করে সেগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় ডাম্পিং করা হোক।

বিশ্বনাথ পৌরপ্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ লুৎফর রহমান দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাসিয়া নদীর ময়লা-আবর্জনা ইতোমধ্যেও অপসারণ করা হয়েছে। বর্তমানেও অপসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। বাসিয়া নদীর ময়লা-আবর্জনার পরিমাণ খুব বেশি। লোকজনকে ময়লা-আবর্জনা না ফেলতে বারবার বলা হলেও এমনকি মাইকিং করা হলেও অনেকে রাতের বেলা নদীতে সেগুলো ফেলছে। মানুষ সচেতন না হলে বারবার ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করেও কিছু হবে না। বাসিয়া নদীর ময়লা ফেলার জন্য আমাদের নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। সেগুলো ডাম্পিংয়ের জন্য আমরা নির্দিষ্ট জায়গা খুঁজছি। ডাম্পিংয়ের জন্য অনেক বড় জায়গা প্রয়োজন, সে রকম জায়গা পাচ্ছি না।’