নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আইস্ক্রিম ও চকলেটের লেয়ার তৈরির অভিযোগ ঘিরে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে নোংরা, পোকামাকড়যুক্ত, মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁচামাল ও কেমিক্যাল-জাতীয় উপাদান দিয়ে পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘কোকো ডিলাইট চকলেট প্রোডাক্টস’ নামের এই কারখানা পরিচালনা করছেন জামায়াতে ইসলামীর কর্মী হিসেবে পরিচিত সাখাওয়াত হোসেন সওকত।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী সাখাওয়াত হোসেন শওকত একসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের আগে শওকত ও তার ভাই সনমান্দি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিলেন।
তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলের পর তিনি জামায়াত ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং এলাকায় জামায়াতের ডোনার হিসেবে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন। স্থানীয়দের দাবি, রাজনৈতিক ছায়া কাজে লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তার ভাই সনমান্দি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর অতীত প্রভাবের কারণে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের পশ্চিম সনমান্দি গ্রামে অবস্থিত কারখানার নেই কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র। ভেতরে রয়েছে বিশাল চুল্লি, শত শত প্লাস্টিকের ড্রাম, উন্মুক্ত অবস্থায় রাখা পচা ও মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁচামাল এবং ছাদের ওপর রয়েছে স্তূপাকৃত অবস্থায় বস্তা-ড্রামে ভর্তি নষ্ট উপাদান। কাঁচামালে পোকামাকড়ের উপদ্রব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। দিনে বন্ধ থাকলেও রাতের অন্ধকারে কারখানায় উৎপাদন চলে। আবার গভীর রাতে পিকআপ ভ্যানে করে বিভিন্ন জায়গায় এসব কেমিক্যাল সরবরাহ করা হয়। ফ্যাক্টরির সামনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী ইকবাল হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে তার ছবি সংবলিত ব্যানার-পোস্টার টানানো রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এটি স্থানীয়দের প্রতিবাদ ঠেকাতে ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কারখানার পাশের এক বাসিন্দা দায়েন ভূঁইয়া বলেন, দীর্ঘদিন তারা দুই ভাই এই ফ্যাক্টরি চালিয়ে আসছেন। রাতের আঁধারে ট্রাকে ভরে মালামাল নিয়ে যেতে দেখা যায়। এই ফ্যাক্টরির মালিক জামায়াত নেতা বলে কেউ কিছু বলেন না। খারাপ কিছু তৈরি করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধা বলেন, গ্রামের নিরিহ মানুষদের বোকা বানিয়ে শওকত রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব করছেন। দিনে বন্ধ দেখিয়ে রাতে সব কাজ করেন। যেসব উপাদান খাবারে ব্যবহার করা হয়, তা খেলে শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। এ সময় তিনি কারখানার বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এলাকাবাসী জানান, দুই ভাই বহুদিন ধরেই রাজনৈতিক পরিচয় পাল্টে এলাকায় প্রভাব খাটাচ্ছেন। কখনো যুবলীগ, কখনো জামায়াতÑ যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই অবস্থান নেন। এই সুযোগে বাড়ির পাশে পচা-খারাপ কাঁচামাল দিয়ে কেমিক্যাল বানানোর মতো ভয়ংকর কাজও করেছেন। ফ্যাক্টরির সামনে জামায়াতের প্রার্থীর বড় বড় পোস্টার লাগিয়ে রাখা হয়, যাতে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস না পায়।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত শওকত নোংরা পরিবেশ ও মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁচামালের উপস্থিতি স্বীকার করলেও দাবি করেন, ‘আমি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কারখানাটি চার মাস ধরে বন্ধ।’ তবে গোপনে রাতের বেলায় উৎপাদন ও পিকআপ ভ্যানে সরবরাহের কথা তিনি অস্বীকার করেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিক বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও পচা কাঁচামাল দিয়ে খাদ্য বা খাদ্য উৎপাদন সম্পূর্ণ অবৈধ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ওই কারখানার বিষয়ে আমার জানা নেই বা কেউ অভিযোগ করেনি। তবে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

