আগামী ১৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বিগ লিগের ১৫তম আসর। এরই মধ্যে এই লিগে খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় উড়ে গেছেন রিশাদ হোসেন। গত সোমবার দিবাগত রাতে অস্ট্রেলিয়ার বিমান ধরেন বাংলাদেশের এই ক্রিকেটার। বিগ ব্যাশ লিগে হোবার্ট হ্যারিকেনসের হয়ে মাঠ মাতাবেন রিশাদ। বিগ ব্যাশের ড্রাফট থেকে দল পেয়েছেন এই লেগ স্পিনার। বিগ ব্যাশের গত মৌসুমেই তার খেলার কথা ছিল। কিন্তু জাতীয় দলের ব্যস্ততা ও বিপিএলের কারণে খেলতে যেতে পারেননি তিনি। গতবার না খেললেও এবার নতুন মৌসুমে রিশাদের প্রতিই আস্থা রাখল হোবার্ট। আগামী ১৬ ডিসেম্বর সিডনি থান্ডারের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে রিশাদের দল হোবার্টের মিশন শুরু হবে।
এদিকে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্দা উঠবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল)। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট উপেক্ষা করে বিগ ব্যাশে খেলার জন্য রিশাদকে এনওসি দিয়েছে বিসিবি। তাই বিগ ব্যাশের পুরো আসরেই এই অলরাউন্ডারকে পাবে হোবার্টের ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। প্রথমবারের মতো বিগ ব্যাশে খেলবেন বলে বাড়তি রোমাঞ্চ কাজ করছে রিশাদের মধ্যে। হোবার্টের হেড অব স্ট্র্যাটেজির দায়িত্বে আছেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার রিকি পন্টিং। তার পরামর্শেই রিশাদকে দলে নিয়েছে হোবার্ট। রিশাদও পন্টিংয়ের বড় ভক্ত। তার সঙ্গে কাজ করতে রীতিমতো মুখিয়ে আছেন বাংলাদেশের তরুণ। ছোটবেলা থেকেই পন্টিংয়ের খেলা দেখে বড় হয়েছেন রিশাদ। তার ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার পেছনেও পন্টিংয়ের অবদান রয়েছে। এ প্রসঙ্গে রিশাদ বলেছিলেন, ‘পন্টিং ছোটবেলায় আমার প্রিয় খেলোয়াড়দের একজন ছিল; আমি তাকে খেলতে দেখতাম। তার সঙ্গে কাজ করার জন্য আমি খুবই রোমাঞ্চিত। আমি রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে কাজ করার জন্য এবং তার কোচিংয়ে খেলার জন্য অপেক্ষা করছি।’
বর্তমানে দেশের ক্রিকেটে সামনের সব ব্যস্ততা বিপিএলের ১২তম আসর ঘিরে। তবে বিপিএল রেখে বিগ ব্যাশ লিগকেই বেছে নিলেন ২৩ বছর বয়সি রিশাদ। বিগ ব্যাশে হোবার্টের হয়ে সব ম্যাচ খেলেই দেশে ফেরেন এই ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার লিগে খেলতে যাওয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার রিশাদ। এর আগে বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব আল হাসান বিগ ব্যাশে খেলেছিলেন। ২০১৪ সালে অ্যাডিলেইড স্ট্রাইকার্সের হয়ে দুটি এবং ২০১৫ সালে মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে চারটি ম্যাচ খেলেন সাকিব। এর মধ্যে প্রথমবার সুযোগ পান ইয়োহান বোথার বদলি হিসেবে। পরেরবার তিনি খেলেন আন্দ্রে রাসেলের বদলি হয়ে। বিগ ব্যাশে দ্বিতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে খেলতে যাওয়া রিশাদের দেশের বাইরে এটি দ্বিতীয় লিগ। এ বছরই পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) সাত ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে লাহোর কালান্দার্সের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন বাংলাদেশের এই প্রতিভাবান লেগ স্পিনার। অবশ্য গত বছরের জুলাইয়েই প্রথম বিদেশি লিগে খেলার স্বাদ পেতে পারতেন রিশাদ। কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগের চতুর্থ আসরে টরেন্টো ন্যাশনালসের হয়ে খেলার কথা ছিল তার, কিন্তু খেলা হয়নি। এরপর খেলা হয়নি বিগ ব্যাশেও। অবশেষে চলতি বছর রিশাদের অপেক্ষা ফুরাল।
২০২৫ সারে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের নবম আসরে বল হাতে সবার নজর কাড়েন রিশাদ। বাংলাদেশের ক্রিকেটে একজন বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনারের যে দীর্ঘদিনের আক্ষেপ ছিল, সেটি পূরণ করে চলেছেন এই তরুণ। টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে সাত ম্যাচে ১৪ উইকেট শিকার করে আগমনী বার্তা দিয়ে রাখেন রংপুর থেকে উঠে আসা এই ক্রিকেটার। ম্যাচের দ্বিগুণ উইকেট শিকারেই তার বোলিংয়ের বিশেষত্ব বোঝা যাবে না, দলের প্রয়োজনের সময়, পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মূল্যবান উইকেট শিকার করে ম্যাচে যে প্রভাব ফেলেন রিশাদ, তা সত্যিই বিস্ময়কর। তার বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ের প্রশংসা হয়েছে সর্বত্র। মূলত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েই টি-টোয়েন্টি লিগের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নজর কাড়েন এই লেগ স্পিনার। যে কারণে দেশের গ-ি পেরিয়ে একের পর এক বিদেশি লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছেন রিশাদ। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপ। এই বিশ^কাপের জন্য বিগ ব্যাশে নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করতে পারবেন এই ক্রিকেটার। স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই বোলিংয়ে সফল তিনি। যেভাবে বোলিংয়ে কীর্তি দেখিয়ে যাচ্ছেন, এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে অনেক দূর এগিয়ে যাবেন এই লেগ স্পিনার। সামনের দিকেই তাকিয়ে আছেন রিশাদও।

