চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী। এতে প্রায় ৪০০ মণ আলু পেয়েছেন।
উৎপাদিত আলুর কিছুটা হাটবাজারে বিক্রি করে চাষাবাদ খরচ মিটিয়েছেন। এরমধ্যে আগামী মৌসুমের জন্য ৫৫ কেজি ওজনের ২৫ বস্তা আলু স্থানীয় কোল্ড স্টোরেজে রাখার জন্য মন স্থির করেছিলেন। কয়েকদিন ঘোরাঘোরি করেও হিমাগারে আলু রাখার বুকিং দিতে পারেননি।
শুধু শাহজাহান আলী নন, হিমাগারে এলাকার ক্ষুদ্র কৃষকরা আলু রাখার সুযোগ পাননি।
কৃষক শাহজাহান আলী জানান, উৎপাদন খরচ ও বীজ আলুর দাম বেশি হওয়ায় আলু উৎপাদনে প্রতি কেজিতে তার খরচ পড়েছে প্রায় ১৮ টাকা। এখন পাইকারি প্রতি কেজি ৯ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আলু বিক্রি করলে লোকসানে পড়বেন।
হিমাগারেও রাখাতে পারেননি। এখন আলু নিয়ে উভয়সংকটে পড়েছেন এই কৃষক।
শুধু শাহজাহান আলী নন, হিমাগারে আলু রাখা নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন ফুলবাড়ীসহ আশপাশের উপজেলার হাজারো কৃষক।
দিনাজপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এক সময় আলু উৎপাদনে পিছিয়ে থাকলেও এখন ফুলবাড়ী উপজেলায় অনেক বেশি আলু উৎপাদন হচ্ছে।
চলতি বছরে উপজেলায় যে পরিমাণ আলু আবাদ হয়েছে, তার ৮০শতাংশ আলু রাখার হিমাগারে জায়গা নেই।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে উপজেলায় আলুর আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছিল ৪৪ হাজার ৮৫ টন আলু।
সেখানে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছে ৪৫ হাজার ৫৭৫ টনেরও বেশি আলু।
এতে গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৪৯০ টন আলু শুধু ফুলবাড়ী উপজেলাতেই বেশি উৎপাদন হয়েছে।
কৃষকদের ভাষ্য, ৮০ ভাগ আলু সংরক্ষণের হিমাগার না থাকায় অধিকাংশ আলু উৎপাদন মৌসুমে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন।
এদিকে দিনাজপুর জেলার দক্ষিণ-পূর্বাংশের ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট- এই পাঁচ উপজেলার মধ্যে শুধু ফুলবাড়ী উপজেলাতেই “ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজ” নামের একটিমাত্র হিমাগার রয়েছে। হিমাগারটির ধারণক্ষমতা ৫৫ কেজি ওজনের বস্তায় ১ লাখ ৬৫ হাজার বস্তা।
যা ওজনে ৯ হাজার ৭৫ টন দাঁড়ায়। কিন্তু কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী শুধু ফুলবাড়ী উপজেলাতেই আলু উৎপাদন হয়েছে ৪৫ হাজার ৫৭৫ টন। এক্ষেত্রে ফুলবাড়ীর উৎপাদিত আলুর পুরোাটাই হিমাগারে রাখার পরও উদ্বৃত্ত থাকছে ৩৬ হাজার ৫০০ টন।
এতে শুধু ফুলবাড়ী উপজেলারই ৮০ শতাংশ আলু রাখার জায়গা থাকছে না। কিন্তু এই হিমাগারে শুধু ফুলবাড়ী নয়, এখানে আশপাশের অন্তত ৮ থেকে ৯টি উপজেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু সংরক্ষণ করে থাকেন।
উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের কৃষক পরীক্ষিত চন্দ্র রায় বলেন, সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন।
উৎপাদিত আলুর ১০০ বস্তা হিমাগারে রাখার মনস্থির করলেও দুই দিন হিমাগারে গিয়ে বুকিং স্লিপ না পেয়ে ঘুরে এসেছেন।
পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া গ্রামের আলুচাষি নূরুন নবী বলেন, ১২৫ বস্তা আলু হিমাগারে রাখতে চাইলেও রাখতে পেরেছেন মাত্রা ৭৫ বস্তা।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, ‘এ বছর আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে।
এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫৭৫ টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকাসহ প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না আসায় আলুর আবাদ ও ফলন দুই-ই ভালো হয়েছে।’
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. আনিছুজ্জামান বলেন, জেলায় ৫৬ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে।
এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ লাখ ৩৫ জাচা ৬৪৯ টন। ‘আলু দাম কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আলু সংরক্ষণের দিকে ঝুকেছেন কৃষকও।
এতে করে প্রত্যেকটি হিমাগারের ওপর চাপ বেড়েছে। আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে আলুর আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে, এতে কৃষকরা লাভবান হবেন।’

 
                             
                                    

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন