বরিশালে লিটন সিকদার ওরফে লিটু নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক সাবেক নেতাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যারাতে সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের বিল্লবাড়ি গ্রামের গাজীবাড়িতে ওই নেতার বাসায় ঢুকে তাকেসহ পরিবারের লোকজনদের এলোপাতাড়ি কোপান জাকির গাজীসহ তার লোকজন।
এতে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) লিটু ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন এবং রক্তাক্ত অবস্থায় তার মা, ভাই-বোনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা গেছে, এই হামলার নেতৃত্ব দেওয়া জাকির গাজী নিহত লিটুর ভগ্নিপতি এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিল্টনের অনুসারী। সংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন বিমানবন্দর থানা পুলিশ এই বিয়োগান্তের ঘটনায় শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করলেও মূল অভিযুক্ত জাকির গাজী ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লিটুর ভগ্নিপতি জাকির গাজী সম্প্রতি গোপনে আরেকটি বিয়ে করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ হয়ে লিটু ও তার বোন মুন্নি আক্তার মিলে জাকিরকে একটি ঘরে আটকে রেখে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। পরে গত ২৭ জুলাই স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ জাকিরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
এ ঘটনায় জাকির গাজী বিমানবন্দর থানায় লিটু ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে একই দিনে মুন্নি আক্তারও জাকিরের বিরুদ্ধে যৌতুক দাবি ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন। পাল্টাপাল্টি মামলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার জেরে বিল্লবাড়িতে জাকিরের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয় এবং লিটুর শাস্তির দাবি ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, এসব কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে ছিলেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিল্টন। লিটু একসময় মিল্টনের ঘনিষ্ঠ হলেও পরবর্তীতে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে তাদের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। লিটুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে এবং মিল্টনের অধিকাংশ কর্মী-সমর্থকই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
মিল্টন এ প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছেন, লিটু তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কিন্তু দল থেকে বহিষ্কারের পর তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। তিনি দাবি করেন, বিল্লবাড়ি এলাকার অধিকাংশ লোকজনই তার কর্মী-সমর্থক হওয়ায় ঘটনাক্রমে তাদের নাম আসছে।
সূত্র জানায়, মিল্টন এলাকার রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব খাটিয়ে একক আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া ছিলেন। এতে করে জাকিরের সঙ্গে লিটুর দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ হয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ জাকিরের স্বজনেরা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেন, যার জেরে ঘটে এই হত্যাকাণ্ড।
নিহত লিটুর বোন মুন্নি আক্তার জানান, ‘তারা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন হামলার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আদালত থেকে জামিন নিয়ে পুলিশের সহায়তায় বাসায় প্রবেশ করেন। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতেই জাকির ও তার সহযোগীরা বাসায় ঢুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে লিটুকে হত্যা করে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের আহত করে। ঘটনার সময় হামলাকারীদের মিল্টনের সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথন করতে দেখা যায় বলেও দাবি করেন তিনি।’
এ ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও নীরব ভূমিকা নিয়েও স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। হত্যাকাণ্ডের পর বিল্লবাড়ি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. রিয়াজ হোসেন জানান, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক প্রধান অভিযুক্ত জাকির গাজীকে গ্রেপ্তারে একাধিক টিম কাজ করছে। এ ছাড়া ঘটনার নেপথ্যে কোনো ‘মাস্টারমাইন্ড’ রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
আপনার মতামত লিখুন :