ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

শঙ্খ নদীতে একটি সেতুই বদলে দিতে পারে চন্দনাইশ-সাতকানিয়ার ৫০ গ্রামের ভাগ্য

এসএম রাশেদ, চন্দনাইশ
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৪, ০৪:২৬ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দোহাজারী পৌরসভাস্থ লালুটিয়া চৌকিদার ফাঁড়ি শঙ্খ নদী পারাপারে চন্দনাইশ-সাতকানিার প্রায় ৫০ গ্রামবাসীর একটি সেতুর স্বপ্ন স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘদিন পর গত সরকারের আমলে ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যের পিসি গার্ডার ব্রিজ। গত বছরের ৭ নভেম্বর ব্রিজ নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এর মধ্যে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর একনেকের সভায়ও এ সেতুর জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়নি।

অতএব, শঙ্খ নদীর দু’পাড়ের মানুষের স্বপ্ন কবে নাগাদ পুরণ হবে, তাতে ফের অনিশ্চয়তা জেগেছে। ব্রিজটি নির্মাণ হলে পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হতো। খরস্রোতা শঙ্খ নদীর কারণে শত শত বছর থেকে বিভাজন ছিল চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড়ের। সেই সাথে চন্দনাইশের ধোপাছড়ি, সাতকানিয়ার বাজালিয়াসহ আরো কয়েকটি ইউনিয়নের জনসাধারণকে নৌকাযোগে এ নদী পেরিয়ে এপার-ওপার আসা-যাওয়া করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। বর্ষাকালে এ দুর্ভোগ আরো চরম আকার ধারণ করে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাছাড়া নৌকাযোগে এ নদী পাড় হতে প্রতিবার ১০ টাকা প্রদান করতে হয়।

এছাড়া বর্ষাকালে নদীতে বেশী পানি হলে তখন দ্বিগুন থেকে তিনগুন ভাড়া গুণতে হয় এ দু’উপজেলার মানুষের। শুধুমাত্র ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু শঙ্খনদীর উপর নির্মাণ করা হলে দু’ পাড়ের সেতুবন্ধন রচনা হতো। তবে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও এপার-ওপারের মানুষের দুর্ভোগের শেষ হয়নি হয়নি। দোহাজারী পৌরসভা ও পুরানগড় ইউনিয়নসহ আশপাশের ইউনিয়ন গুলোর সাধারণ মানুষের মাঝে বিভাজনের একটি ধারা প্রবাহিত হয়ে আসছে খরস্রোতা শঙ্খনদীর জলরাশির মধ্যদিয়ে। দুই পাড়ের পূর্বপাড়ের প্রায় ৫০টি গ্রামের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে সকলেরই দুর্ভোগ লেগে থাকে সারা বছর। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে প্রতিবারই দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসলে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা ভোট চাইতে এসে লালুটিয়া চৌকিদার ফাঁড়ি এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যেতেন। কিন্তু বাস্তবতার বিষয়টি ছিল ভিন্ন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতার দুয়ারে পৌঁছে যাওয়ার পর কেউ আর তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার ন্যূনতম সৌজন্যবোধ দেখায়নি শঙ্খ নদীর দু’পাড়ের মানুষের স্বপ্নের এ সেতুটি গড়াতে। গত বছর ৭ নভেম্বর সেতুটি নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও এরপর আর কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, শঙ্খ নদীর পশ্চিম পাড়ে চৌকিদার ফাঁড়ি থেকে নৌকাযোগে ওপারের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন।

নৌকাযাত্রীদের মধ্যে জসীম, কালাম, বাবর, সুভাষ দাশ বলেন, তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন চৌকিদার ফাঁড়িতে ব্রিজ নির্মাণের। কবে নাগাদ এ সেতুর কাজ শুরু হবে, সে সংশয় কাটেনি এখনও তাদের। ইতিমধ্যে কয়েক দফা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ অসীম উদ্দীন, পরিবেশ পরামর্শক আশরাফুল আলম, অর্থ পরামর্শক আশীষ ধর ও চন্দনাইশ উপজেলা প্রকৌশলী যথাক্রমে মো. বেলাল হোসেন ও জুনাইদ আবছার চৌধুরী।

উল্লেখ্য, এ সেতুটি নির্মাণ হলে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার সাথে যেমন সংযোগ সাধিত হতো, তেমনি নৌকাযোগে শঙ্খ নদী পারাপারের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতো হাজার হাজার মানুষ। পাশাপাশি দু’পাড়ের হাজার হাজার কৃষকের তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হতো। সেই সাথে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে যাতায়াতের বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হতো। সেতুটি নির্মাণ হলে শঙ্খ নদীর দু’পাড়ের মানুষের সড়ক যোগাযোগ উন্মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি এ এলাকার উৎপাদিত সবজি চাষিরা ন্যায্যমূল্য পেতো। একে এলাকার কৃষকদের জীবনে সচ্ছলতা ফিরে আসতো।