ঢাকা সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

টেকনাফে মানব পাচারকারী চক্রের আস্তানা থেকে ৮৪ জন উদ্ধার

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ০৫:৩৯ পিএম
উদ্ধার হওয়া ভুক্তভোগীরা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কক্সবাজারের টেকনাফে র‌্যাব-বিজিবির যৌথ অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ মানব পাচারকারী চক্রের ৩ সদস্য আটক এবং ৮৪ ভুক্তভোগী উদ্ধার হয়েছে।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ‍্য নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ ব‍্যাটালিয়ন ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান ও র‌্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান।

তিনি জানান, টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এবং র‌্যাব ১৫-এর একটি যৌথ আভিযানিক দল গত ২১ সেপ্টেম্বর দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় লুকিয়ে থাকা মানব পাচারকারী চক্রের মূল আস্তানায় চরম আঘাত করেছে। এই অভিযানে শুধু অপরাধীদেরই ধরা হয়নি, অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে পাচারকারীদের হাতে বন্দি অসংখ্য ভুক্তভোগীকেও।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় যে, বাহারছড়া কচ্ছপিয়া এলাকার গহীন পাহাড়ে একটি পাচারকারী চক্র মালয়েশিয়া কিংবা থাইল্যান্ডে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগীকে আটকে রেখেছে। খবর পাওয়ামাত্রই অধিনায়ক, ২ বিজিবির নেতৃত্বে একটি মানব পাচারবিরোধী অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে শুরুতে বাহারছড়া পাহাড়ি এলাকা থেকে একজন পাচারকারীকে আটক এবং ৪ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। 

উদ্ধারের পর ভিকটিমদের কাছ থেকে লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার বর্ণনা এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। প্রাথমিক সাফল্যের পরে এই সংঘবদ্ধ চক্রকে চরম আঘাত করতে টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, লে. কর্নেল আশিকুর রহমান এবং অধিনায়ক র‌্যাব ১৫,  লে. কর্নেল কামরুল হাসান একটি সমন্বিত ও বৃহৎ যৌথ অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করেন।

অভিযানের প্রথম ধাপে ১৪ জন এবং পার্শ্ববর্তী আরেকটি পাহাড় থেকে ১৩ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। এরপরই রাজারছড়া এলাকার অন্য একটি পাহাড়ে অভিযান চালানোর সময় পলায়নরত পাচারকারীরা মরিয়া হয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে আগুয়ান যৌথ বাহিনীকে লক্ষ্য করে প্রথমে ২ রাউন্ড ও পরে আরও ১ রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং অপহরণকারীরা এ সময় বেশ কিছু জিম্মিকে পাহাড়ের নিচে ঠেলে দেয়।

নিরপরাধ ভুক্তভোগীদের জীবন রক্ষার্থে পাল্টা গুলি না ছুড়ে যৌথ বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে পাহাড়াটিকে ঘিরে রেখে খাড়া ঢাল বেয়ে সশস্ত্র পাচারকারীদের ধরতে পাহাড়ের চূড়ায় কৌশলে দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। 

বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের সাহসিকতা ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায় প্রায় ১২ ঘণ্টায় দুঃসাহসিক অভিযান শেষে ২ জন পাচারকারীকে আটক এবং ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান ও একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার  করা হয়। এ ছাড়াও তাদের আস্তানা তল্লাশি করে একটি বিদেশি পিস্তল, দুইটি দেশিয় রামদা ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয়। এ সময় ৩টি অস্ত্রের চেম্বার থেকে ৩ রাউন্ড তাজা গুলি জব্দ করা হয়।

আটক ৩ মানবপাচারকারী। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

অভিযানে যৌথ আভিযানিক দলটি বিভিন্ন পাহাড় ও তার পাদদেশ থেকে ৫১ জন এবং পাহাড়ের চূড়া থেকে আরও ৬ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে। একই দিন দমদমিয়া বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ বড়ইতলি এলাকা থেকে আরও ৪ জনকে উদ্ধার করা হয়। 

সামগ্রিকভাবে, যৌথ অভিযানে মোট ৮৪ জন ভুক্তভোগীকে পাচারকারীদের কবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে এই অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত ৩ জন আসামির বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাদের হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

আসামিরা হলেন বাহারছড়া ইউপির কচ্ছপিয়ার মো. আব্দুল্লাহ,রাজারছড়া ১নং ওয়ার্ডের এলাকার সাইফুল ইসলাম এবং একই এলাকা রাজারছড়ার মো. ইব্রাহীম।

পলাতক আসামিরা হলেন মৃত মীর কাসেমের ছেলে রেজাউল করিম ও মমতাজের ছেলে আয়াতুল তনজিদ।

উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে: বিদেশী পিস্তল-১টি, বিদেশি পিস্তলের গুলি ১টি, একনালা বন্দুক ১টি, একনালা বন্দুকের গুলি ১টি, ওয়ানগান শুটার ১টি, ওয়ানগান শুটারের গুলি ১টি, দেশি রামদা ২টি ও চাকু ১টি।