ঢাকা শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫

সীমান্তে গুলিতে নিহত দুই যুবকের মরদেহ এক মাসেও ফেরত দেয়নি বিএসএফ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৫, ১২:০১ পিএম
মরদেহ ফেরত না দেওয়ায় নিহতদের পরিবারের শোক। ছবি- সংগৃহীত

ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত দুই যুবকের মরদেহ ফেরত আনতে এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো অগ্রগতি নেই। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) মরদেহ ফেরত না দেওয়ায় নিহতদের পরিবারে শোক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। পরিবারগুলোর অভিযোগ, বিজিবির কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে মরদেহগুলো দেশে আনা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ এপ্রিল রাতে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন গোপালপুর গ্রামের হানিফ আলীর ছেলে ওবাইদুর রহমান। ঢাকায় গাড়ি চালানো ওবাইদুর সেদিন রাতে কয়েক বন্ধুর সঙ্গে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। ভারতের মধুপুর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে অন্যরা পালিয়ে গেলেও ধরা পড়েন ওবাইদুর। কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা। পরে সীমান্তের ভারতীয় অংশে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিএসএফ মরদেহ নিয়ে যায়, কিন্তু এতদিনেও তা ফেরত দেয়নি।

ওবাইদুর রহমানের মা নাসিমা খাতুন বলেন, ছেলের মরদেহ ফিরে পেলে তাকে দাফন করে অন্তত মনকে বোঝাতে পারতাম যে, সে আমার কাছেই আছে। বিজিবির কাছে বারবার গিয়েও কিছু হয়নি।

আরেক যুবক ওয়াসিমের মরদেহ নদীতে ভেসে থাকতে দেখা যায়। গত ৬ এপ্রিল ভারতে প্রবেশ করেন বাঘাডাঙ্গা গ্রামের ওয়াসিম ও আরও কয়েকজন। হাবাসপুর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যদের ধাওয়া খেলে বাকিরা পালিয়ে গেলেও ওয়াসিম ধরা পড়েন। ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় ইছামতি নদীতে একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন বাংলাদেশি কৃষকেরা। পরে স্থানীয়রা নিশ্চিত হন, মরদেহটি ওয়াসিমের এবং সেটি ভারতের অংশে অবস্থান করছে। বিএসএফ পরে মরদেহটি নিয়ে যায়।

ওয়াসিমের বড় ভাই মেহেদী হাসান বলেন, ছবিতে নিশ্চিত হওয়ার পর বিজিবিকে জানাই। তারা লিখিত অভিযোগ নিলেও কয়েকদিন পর জানায়, আমাদের পক্ষে মরদেহ আনা সম্ভব নয়।

মা ফিরোজা খাতুন বলেন, বিজিবি বলছে, পাসপোর্ট-ভিসা করে নিজেরাই ভারতে গিয়ে মরদেহ আনতে হবে। আমরা গরিব, মূর্খ মানুষ, কীভাবে মরদেহ আনব?

মরদেহ ফেরত আনার ব্যাপারে ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, বিএসএফ জানিয়েছে ওয়াসিমের মরদেহটি ভারতের পুলিশের কাছে আছে। তারা তার মরদেহটির ময়নাতদন্ত করেছে। ভারতীয় পুলিশের ভাষ্যমতে- মরদেহ নিতে হলে বৈধভাবে ভারতীয় পুলিশের কাছে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে উপযুক্ত প্রমাণ ও শনাক্ত শেষে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এনওসি নিতে হবে। পরে তাদের ফরেনার রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে গিয়ে যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করতে হবে। এই বিষয়গুলো ওই দুই পরিবারকে জানানো হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে যাতে তারা মরদেহ ফেরত আনতে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে।

বিজিবির মাধ্যমে মরদেহ ফেরত আনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএসএফের সঙ্গে অনেকবার পতাকা বৈঠকসহ নানা চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। বিএসএফ জানিয়েছে, বিষয়টা পুরোপুরি ভারতীয় পুলিশ হ্যান্ডেল করছে। তাদের কিছু করার নেই। সেক্ষেত্রে তারা বলেছে, পরিবারের পক্ষ থেকে বৈধ উপায়ে ভারতে এসে সব কার্যাদি সম্পন্ন করে মরদেহ ফেরত নিতে হবে।