ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি পেল জিআই স্বীকৃতি

নেত্রকোণা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ১২:৫৩ এএম
নেত্রকোনার ঐতিহ্যবাহী বালিশ মিষ্টি। ছবি- সংগৃহীত

নেত্রকোনার ঐতিহ্যবাহী বালিশ মিষ্টি দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। শত বছরের পুরনো এই মিষ্টির জিআই স্বীকৃতিতে উচ্ছ্বসিত স্থানীয়রা। সম্প্রতি পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি) বালিশ মিষ্টিকে দেশের ৫৮তম জিআই পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

বালিশ মিষ্টির উৎপত্তি নেত্রকোনা শহরের বারহাট্টা রোড এলাকায়। প্রায় ১২০ বছর আগে স্থানীয় মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক গয়ানাথ ঘোষ প্রথম এটি তৈরি করেন। ছোট বালিশের মতো লম্বাটে ও নরম আকৃতির কারণে এর নামকরণ হয় ‘বালিশ মিষ্টি’। ১৯৪৭ সালের আগেই কালীগঞ্জ শহরে এটি জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। স্বাদ, মান ও গুণে অতুলনীয় হওয়ায় এখনও মানুষ এই মিষ্টিকে গয়ানাথ ঘোষের নামেই চেনে।

গয়ানাথ ঘোষের পরিবার দেশভাগের সময় ভারতে চলে গেলেও তিনি নেত্রকোনাতেই থেকে যান। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে বয়সজনিত কারণে দোকানটি কুমুদ চন্দ্র নাগকে বিক্রি করেন। পরবর্তীতে মালিকানা হাতবদল হলেও দোকানের নাম ‘গয়নাথ ঘোষ’ অপরিবর্তিত থাকে। ধীরে ধীরে এর খ্যাতি দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, আর স্বাদ নিতে ভোজনরসিকরা দূর-দূরান্ত থেকে নেত্রকোনায় আসতে শুরু করেন।

ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টির মূল উপকরণ হলো দুধ, ছানা, ময়দা ও চিনি। দুধ থেকে ছানা তৈরি করে মণ্ড বানানো হয়, এরপর বালিশের আকৃতি দিয়ে চিনির রসে ভিজিয়ে পরিবেশনের সময় উপরে মালাইয়ের প্রলেপ দেওয়া হয়। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এটি ২-৩ দিন ভালো থাকে, শীতকালে টিকে ৭-৮ দিন পর্যন্ত। বর্তমানে আকারভেদে দাম ৩০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত, যদিও শুরুতে বিক্রি হতো মাত্র ৫০ পয়সায়।

বর্তমানে নিখিল মোদকের তিন ছেলে গয়নাথ ঘোষের দোকান পরিচালনা করছেন।

বড় ছেলে বাবুল মোদক বলেন, ‘এটি জেলার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা গর্বিত। মান বজায় রেখে ঐতিহ্য ধরে রেখেছি, দোকানের নামও পরিবর্তন করিনি। মানুষ যেখান থেকেই আসুক, আমাদের দোকান থেকে বালিশ মিষ্টি খেয়ে যায়।’

তিনি আরও জানান, দোকানের কোনো শাখা বাইরে খোলা হয়নি এবং অনলাইনেও বিক্রি করা হয় না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, ‘নেত্রকোনার নাম শুনলেই বালিশ মিষ্টি সবার মনে ভেসে ওঠে। অনুমোদন হয়ে গেছে, এখন অফিসিয়াল চিঠি পাওয়ার পর আমরা জিআই সার্টিফিকেট গ্রহণ করব।’

বালিশ মিষ্টি নেত্রকোনার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গর্বের প্রতীক হিসেবে নতুনভাবে জাতীয় স্বীকৃতি পেল।