ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

নোয়াখালী হানাদারমুক্ত দিবস আজ

নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ০৬:২০ পিএম
মুক্ত স্কয়ার নোয়াখালী। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

নোয়াখালী হানাদারমুক্ত দিবস আজ (৭ ডিসেম্বর)। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী জনতার তীব্র প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নোয়াখালী থেকে পরাজিত হয়ে সরে যায়। স্বাধীনতার এই ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণে জেলা পরিষদ পিটিআইয়ের দক্ষিণ গেটে নির্মাণ করেছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘মুক্ত স্কয়ার’।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩ এপ্রিল নোয়াখালী দখল করে পাকিস্তানি বাহিনী। পিটিআই ও বেগমগঞ্জ চৌরাস্তার সরকারি কারিগরি বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয় তাদের ঘাঁটি। রাজাকারদের সহায়তায় শ্রীপুর, গোপালপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে পরিচালিত হয় হত্যা, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ। এসব ঘটনায় প্রাণ হারান শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু।

দখলদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত হন মুক্তিযোদ্ধারা। কোম্পানীগঞ্জ, বামনী, বগাদিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন বহু বীর মুক্তিযোদ্ধা। সোনাপুরের শ্রীপুর এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় শতাধিক নিরীহ মানুষকে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ফজলুল হক বাদলসহ বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ২৫ মার্চের পর প্রায় এক মাস নোয়াখালী ছিল মুক্তাঞ্চল। কিন্তু ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা মাইজদীর বিভিন্ন রাজাকার ক্যাম্পে একযোগে আক্রমণ চালান। অল্প সময়েই অধিকাংশ ক্যাম্প মুক্ত হলেও পিটিআই ক্যাম্পে প্রতিরোধ ছিল তীব্র।

তিনি আরও বলেন, গভীর রাতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের ঘাঁটি ধ্বংস করেন। ভোরের দিকে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে ৭ ডিসেম্বর সকালেই নোয়াখালী আনুষ্ঠানিকভাবে শত্রুমুক্ত হয়। তবে ওই দিন জেলা স্কুলের কাছে রাজাকারদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন এক মুক্তিযোদ্ধা।

বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কামাল হোসেন মাসুদ বলেন, ‘নোয়াখালী মুক্ত দিবস শুধু স্মৃতি নয়, আমাদের গৌরব। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই ইতিহাস ভুলে না যায় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সমুচিত সম্মান নিশ্চিত করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান দিলে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাও সম্মানিত হব।’

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিট কমান্ডের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নোয়াখালী হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে রোববার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে পতাকা উত্তোলন, স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিজয় র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে।’

নোয়াখালী মুক্তির এই দিনটি শুধু একটি জেলার নয়, সমগ্র জাতির বিজয়ের ইতিহাসকে ধারণ করে বলে মন্তব্য জেলাবাসীর।