ঢাকা সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

পিরোজপুরে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ০৪:৫৭ পিএম
সাবেক চেয়ারম্যান এম. কে. সবুর তালুকদার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সমুদয়কাঠি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম. কে. সবুর তালুকদারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়নের পনেরোটি লোহারপুল ও বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। 

এসব বিষয়ে অভিযোগ তুলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য ইউপি সদস্য ও স্থানীয় একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের দশ বছর অতিক্রম হলেও অজ্ঞাত কারণে সেসব তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। ফলে ভুক্তভোগীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। 

সাগরকান্দা গ্রামের প্রবীণ নাগরিক মো. নিয়াজ তালুকদার অভিযোগ করেন, ‘সাবেক চেয়ারম্যান সবুর তালুকদার ইউনিয়নের পনেরোটি পুরোনো লোহারপুল এবং ৮নং ওয়ার্ডের একটি ব্রিজের গাইড ওয়ালের ইট বিক্রি করে অন্তত এক কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন।’

‘এ ছাড়া টিআর, কাবিখা, জিআর, কাবিটা, ভিজিডি ও এডিবিসহ বিভিন্ন প্রকল্প থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। সাগরকান্দা স্কুল মাঠে বালু ভরাটের অর্থও আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির অর্থে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। তার অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে বিএনপি বা জামায়াতের ট্যাগ দিয়ে পুলিশি হয়রানির শিকার হতেন।

বর্তমান চেয়ারম্যান মো. হুমাউন কবির বেপারী বলেন, ‘সবুর তালুকদার একসময় বিএনপির রাজনীতি করলেও পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। দাপট খাটিয়ে ভোট কারচুপি করে চেয়ারম্যান হন। তিনি পরিষদের বরাদ্দের অধিকাংশ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের পুরোনো লোহারপুল বিক্রি করে ব্যক্তিগত গুদামে মজুত রাখতেন। এমনকি একবার গভীর রাতে সরকারি মালামাল বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়েন।’

‘এ ছাড়া চল্লিশ দিনের ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ১০০ মেট্রিক টন টিয়ার, কাবিখা, কাবিটা ভুয়া সিপিসি করে টাকা উত্তোলন করেন, যাহার প্রমাণ উপজেলার অফিসে আছে।’ 

এম. কে. সবুর তালুকদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জমা পড়লেও সেসব অভিযোগ আজও তদন্তের মুখ দেখেনি। এমনকি নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার সময় পরিষদের কোনো নথিপত্র বা হিসাব বুঝিয়ে দেননি বলে অভিযোগ করেন হুমাউন কবির বেপারী।

ইউপি সদস্য মো. সেলিম হোসেন অভিযোগ করেন, ‘সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনুদান ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকাও আত্মসাৎ করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে তারা তৎকালীন ইউএনও’র কাছে অনাস্থা প্রস্তাব দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পরে পিরোজপুর জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছিলাম। অজ্ঞাত কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে এম. কে. সবুর তালুকদার সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সব অভিযোগ মিথ্যা। পরিষদের পুরোনো লোহারপুলের মালামাল আমার ব্যক্তিগত গুদামে রাখা হয়েছিল, কারণ সেটি পরিষদের চেয়ে কাছে ছিল। পরে আমি নতুন চেয়ারম্যানকে বুঝিয়ে দিয়েছি।’