প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাসিয়া নদী বর্তমানে পরিবেশ দূষণের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় স্রোতস্বিনী এই নদী এখন দখলদারদের কবলে পড়ে প্রায় সংকুচিত হয়ে গেছে।
নদীর উভয় তীরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা। নদীর যে অংশটুকু এখনো অবশিষ্ট আছে, সেই অংশটুকুকেও পরিণত করা হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে।
প্রতিদিন সেখানে ফেলা হচ্ছে দোকানপাট ও বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা। পলিথিন ও প্লাস্টিকও নির্বিচারে নদীতে ফেলা হচ্ছে। নদীতে ফেলা ময়লা-আবর্জনা পঁচে-গলে চারদিকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে এই দুর্গন্ধ দ্বিগুণ হয়ে যায়।
ফলে পৌর শহরের মানুষজন, স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রী ও বাজারে আসা ক্রেতাসাধারণের চলাচল অসহনীয় হয়ে উঠছে। এতে করে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরশহরের বাসিয়া নদীর অংশের উভয় তীরজুড়ে রয়েছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। দু’তীরেই ময়লা-আবর্জনায় ঠাসা।
নদীর দিকে তাকালে মনে হয়, মৃতপ্রায় একটি খাল যেন ময়লার ভাগাড় হিসেবে পড়ে আছে। সেখানে ফেলা হচ্ছে দোকানের উচ্ছিষ্টাংশসহ নানা ধরনের বর্জ্য। এমনকি সেখানে মৃত মোরগও ফেলা হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশ্বনাথ পৌরসভা। তবে বাস্তবে সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষিত হয়ে আসছে। বাসিয়া নদীর বর্তমান পরিস্থিতি ভবিষ্যতে বড় ধরনের পরিবেশঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
বিশ্বনাথ উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মার্চে উপজেলা কোর্ট পয়েন্ট থেকে টিএন্ডটি মোড় পর্যন্ত বাসিয়া নদীর দুই তীরের সাড়ে তিন মিটার অংশ পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট স্থানে নদীর ময়লা-আবর্জনা ডাম্পিং না করে নদীতীরেই তা ফেলে রাখার কারণে বৃষ্টির পানিতে সেই ময়লা-আবর্জনা পুনরায় নদীতে মিশে যায়।
বিশ্বনাথ পৌরশহরের ব্যবসায়ী আমিনুল বলেন, ‘বাসিয়া নদীর ময়লার দুর্গন্ধে ঠিকমতো ব্যবসা-বাণিজ্য চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই।’
বিশ্বনাথ বাজারে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন, ‘এমনিতেই দখলের কারণে বাসিয়া নদী সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তার ওপর নদীভর্তি ময়লা-আবর্জনা এটিকে একেবারে শেষ করে দিচ্ছে।’
বিশ্বনাথের সংবাদকর্মী রফিকুল ইসলাম জুবায়ের বলেন, ‘বাসিয়া নদীর দুর্গন্ধ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, যার ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আমি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই, দ্রুত বাসিয়া নদীর ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করে সেগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় ডাম্পিং করা হোক।’
বিশ্বনাথ পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ লুৎফর রহমান দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ–কে বলেন, ‘বাসিয়া নদীর ময়লা-আবর্জনা ইতোমধ্যে কয়েক দফা অপসারণ করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও অপসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। বাসিয়া নদীতে ময়লা-আবর্জনার পরিমাণ খুব বেশি। লোকজনকে বারবার ময়লা না ফেলতে বলা হলেও, এমনকি মাইকিং করার পরও অনেকে রাতের বেলা নদীতে ময়লা ফেলে।
মানুষ সচেতন না হলে বারবার ময়লা অপসারণ করেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। বাসিয়া নদীর ময়লা ফেলার জন্য আমাদের নির্দিষ্ট জায়গা প্রয়োজন। ডাম্পিংয়ের জন্য বড় জায়গা দরকার, তবে এখনো সে রকম উপযুক্ত জায়গা পাওয়া যায়নি।’

-20251208232637.webp)

