বর্তমানের সোশ্যাল মিডিয়ার ‘লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার’ সংজ্ঞাগুলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যুগে ছিল না, তবে এই আধুনিক প্রতিক্রিয়ার মূলে যে মনস্তত্ত্ব কাজ করত, তা অবশ্যই ছিল। রবীন্দ্রনাথ নিজেও তার সৃষ্টি ও প্রতিভার ‘ফলোয়ার’ পেতেন, তবে আজকের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বদলে তার আশ্রয়স্থল ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা, বিশেষ করে প্রিয়নাথ সেন।
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য, গান, নাটক, গল্প ও নানা সৃষ্টির মূল প্রেরণা ও সমৃদ্ধি হয়েছিল তার বন্ধু প্রিয়নাথ সেনের সুগভীর সমর্থন ও তত্ত্বাবধানে। প্রিয়নাথ ছিলেন পণ্ডিতপ্রবর ভাষাবিদ, যিনি বাংলা, সংস্কৃত, ইংরেজি থেকে ফরাসি ও জার্মান ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের সমস্ত রচনা মনোযোগ দিয়ে পড়তেন, বিশ্লেষণ করতেন এবং প্রয়োজনীয় সুচিন্তিত পরামর্শ দিতেন। রবীন্দ্রনাথ এই বন্ধুপ্রতীমের প্রতিক্রিয়া ও প্রশংসাকে আজকের ‘লাইক’ হিসেবে দেখে থাকতেন, যা তার সৃষ্টিকে আরও প্রাণবন্ত ও নিখুঁত করত।
শুধু সাহিত্য নয়, রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবনে ও ব্যবসায়িক ঝড়-ঝঞ্ঝায় প্রিয়নাথ সেন ছিলেন অবিচল সহায়ক। ‘ঠাকুর কোম্পানি’র ব্যবসায়িক ব্যর্থতায় ও দেনায় পড়ার সময়ে তিনি দায়িত্ব নিয়ে কবির সব দেনা মেটাতে সাহায্য করেছিলেন। ব্যক্তিগত শোক ও দুঃখে যেমন স্ত্রীর মৃত্যু, সন্তানের অসুস্থতা, পারিবারিক ঝামেলায় প্রিয়নাথ ছিলেন রবীন্দ্রনাথের আশ্রয় ও সুরক্ষার ছায়া।
এছাড়া ফলিত জ্যোতিষচর্চায়ও প্রিয়নাথ ছিলেন সিদ্ধহস্ত, যা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন। তার সন্তানদের কোষ্ঠী বিচার পর্যন্ত তিনি প্রিয়নাথের ওপর ভরসা রাখতেন।
এক কথায়, রবীন্দ্রনাথের জীবনে প্রিয়নাথ সেন ছিলেন সেই বন্ধুর মতো যিনি ‘লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার’-এর আধুনিক অভিব্যক্তিকে বহুবচনে রূপ দিয়েছিলেন। কবির অনেক ‘ফলোয়ার’ থাকলেও তার ‘ফলো’ ছিলেন এই অনন্য বন্ধুর কাছে, যিনি তার সৃষ্টির সত্যিকারের মূল্যায়ন ও সমর্থন করে তাকে সমৃদ্ধ করেছেন।