ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

উৎসব করতে টাকা চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সাবেক সমন্বয়কের চিঠি

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক অনুদান ও সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। তার আবেদনে ‘জোরালো সুপারিশ’ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। এই আবেদনের একটি অনুলিপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি ঘিরে শুরু হয়েছে আলোচনা ও সমালোচনা।

ফেসবুকে চিঠির অনুলিপি দিয়ে কেউ কেউ দাবি করছেন, ৭৬ লাখ টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যে ৭০টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

তবে সালাউদ্দিন আম্মার গত মঙ্গলবার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা বিজয় উদযাপন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু অনেকেই এই আয়োজন ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। কারণ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়লে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক আধিপত্য দুর্বল হয়ে পড়ে।’

জানা গেছে, অনুষ্ঠানের জন্য ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২১টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি প্রস্তুত করা হলেও এখন পর্যন্ত ১৪টি প্রতিষ্ঠানে তা পৌঁছেছে।

চিঠির কিছু প্রস্তাবনা বাংলায়, আবার কিছু ইংরেজিতে করা হয়েছে। চিঠির সঙ্গে অনুষ্ঠানের বিস্তারিত বিবরণ ও বাজেট সংযুক্ত করা হয়েছে।

এক বাংলায় করা চিঠিতে লেখা হয়েছে- ‘রাজশাহীর গৌরবময় ইতিহাসে ৩৬ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনটি আমরা ‘জুলাই আন্দোলন’ হিসেবে স্মরণ করি, যেখানে বহু তরুণ শহীদ হয়েছিলেন এবং অনেকে আহত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা আয়োজন করতে যাচ্ছি ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব।’ এই উৎসবে রাজশাহীর শহীদ পরিবার, আহতদের পরিবার, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সম্মানিত সমন্বয়কবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তরুণ প্রজন্মকে তাদের আত্মত্যাগের গল্প জানানো।’

এই আবেদনে সালাউদ্দিন আম্মার ছাড়াও সই করেছেন কে এস কে হৃদয়, যিনি ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’-এর আয়োজক, ক্যাম্পাস বাউলিয়ানার ডিরেক্টর ও কো-ফাউন্ডার।

গত ৯ জুলাই তাদের প্রস্তাবনায় উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব লিখেছেন, ‘স্ট্রংলি রিকমেনডেড’। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে ২১ জুলাই আবেদন করা হলে, ২৩ জুলাই তারা ২ লাখ টাকা অনুদান অনুমোদন করেছে বলে জানা গেছে।

তবে এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘শুধু সালাউদ্দিন নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সংগঠন বা ব্যক্তি যদি সহায়তার জন্য প্রস্তাবনা দেয়, আমি তা সুপারিশ করি। কারণ আমাদের নিজস্ব কোনো অর্থায়ন তহবিল নেই। গত এক বছরে আমি শতাধিক এমন সুপারিশ করেছি।’

চিঠি নিয়ে বিতর্কের পর গত ২৭ জুলাই ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাসে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন সালাউদ্দিন আম্মার।

তিনি পোস্টে লেখেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে ভয়াবহ মিডিয়া ট্রায়াল চলছে। আমি চাইলে এই আয়োজন থেকে কোটি কোটি টাকা ইনকাম করতে পারতাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে একটি বড় কনসার্ট আয়োজনের প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম, কিন্তু প্রশাসন জানায় তাদের কাছে কোনো ফান্ড নেই। তবে তারা অন্যান্য সহযোগিতা দেবে বলে জানায়। এরপর উপাচার্যের স্বাক্ষর নিয়ে আমরা বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি, ব্যাংক ও সিটি করপোরেশনে প্রস্তাবনা পাঠাই।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমি চেয়েছিলাম প্রোগ্রাম শেষে আপনাদের সবকিছু পরিষ্কার করে দেব। কিন্তু এত অসুস্থতার মধ্যে একটা আয়োজন করতে গিয়ে এত প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছি। এখন পর্যন্ত ১৫টি ব্যাংকের হেড অফিসে গেছি, সবাই রিজেক্ট করেছে। শুধু ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৫ হাজার টাকা, চেম্বার অব কমার্স ৩০ হাজার টাকা এবং নগর ভবন ২ লাখ টাকা দিয়েছে। এই ছাড়া আমরা এখনো কোনো বাজেট ম্যানেজ করতে পারিনি।’
 
এদিকে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) আরেকটি স্ট্যাটাসে সালাউদ্দিন লেখেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৯টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করা হয়েছে। প্রতিটি টাকার হিসাব স্বচ্ছতার সঙ্গে তুলে ধরা হবে। আয়োজন শেষে সব ডকুমেন্টস প্রকাশ করা হবে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘বিজয় উৎসব গত বছর করতে পারিনি ফেনীর বন্যার কারণে। রাজশাহীর এই আন্দোলনে বিশেষ অবদান ছিল, তাই বিজয় উৎসব রাজশাহীতেই হবে।’

সাংস্কৃতিক আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরে সালাউদ্দিন বলেন, ‘এটা কোনো ভণ্ডামি বা ফুটেজখোরি না। আমি একজন সাংস্কৃতিক কর্মী। আমি জানি, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারলে ক্যাম্পাস থেকে আধিপত্যবাদী ও পেশীশক্তির রাজনীতি দুর্বল হবে।’