ঢাকা শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

রাকসুর খসড়া ভোটার তালিকায় শাস্তিপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতাদের নাম!

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ১১:১২ এএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। ছবি- সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকায় শাস্তিপ্রাপ্ত ও বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা, সাবেক শিক্ষার্থী এবং বিতর্কিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

বুধবার (৬ আগস্ট) রাতে তালিকা প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা ও ক্ষোভ তৈরি হয়।

রাকসুর গঠনতন্ত্রের ৩ (গ) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বেআইনি ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত এবং দোষী সাব্যস্ত হয়ে একাডেমিক প্রোগ্রাম থেকে স্থগিতকৃত শিক্ষার্থীরা সদস্যপদ লাভের যোগ্য নন।’

শাস্তিপ্রাপ্তদের নাম তালিকায়

২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় র‌্যাগিং, সিট বাণিজ্য, আন্দোলনে হামলাসহ নানা অভিযোগে ৩৩ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়। তাদের মধ্যেও একাধিকজনের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার রায়ের নাম ওই হলের ১৪৬ নম্বরে, একই হলের ৪৪৭ নম্বরে দেখা গেছে ছাত্রলীগ নেতা মিশকাত হাসানের নাম, যিনি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গালিবের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

দুই বছর শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে বিজয়-২৪ হলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম (তালিকায় ৩৮১ নম্বরে), নবাব আব্দুল লতিফ হলের শামীম রেজা (১৮৫ নম্বর), শাহ মখদুম হলের আব্দুল্লাহ আত তাসরিফ (৩৫৩ নম্বর) এবং রোকেয়া হলের এক বছরের শাস্তিপ্রাপ্ত আলফি শারিন আরিয়ানা (৫৭৯ নম্বর) খসড়া তালিকায় রয়েছেন।

এ ছাড়া কয়েকজন বহিষ্কৃত বা ক্যাম্পাস ত্যাগ করা ছাত্রলীগ নেতার নামও বিভিন্ন হলের তালিকায় দেখা গেছে।

সাবেক শিক্ষার্থীরাও ভোটার তালিকায়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী জি. কে. এম. মেশকাত চৌধুরী (মিশু) গত ১২ নভেম্বর মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফলে উত্তীর্ণ হন। তবে তার ছাত্রত্ব শেষ হলেও শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ভোটার তালিকায় তাকে ২২৪ নম্বরে রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘অনেক আগেই ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে, ভোটার তালিকায় থাকার কথা না। যেহেতু আপত্তি করার সুযোগ আছে, বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে আশা করছি।’

বাদ পড়েছেন আইবিএ শিক্ষার্থীরা

ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে অনেক শিক্ষার্থী বাদ পড়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ৫ম থেকে ৮ম ব্যাচের মধ্যে যারা হলে সিট বরাদ্দ পেয়েছেন, শুধু তাদের নাম রয়েছে। বাকি শিক্ষার্থীদের নাম তালিকায় আসেনি।

আইবিএ পরিচালক অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাঠাতে বলা হলে আমরা তা প্রেরণ করেছি। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।’

নির্বাচন কমিশন যা বলছে

রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ভোটার তালিকা নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের তালিকা আমাদের কাছে থাকে না। হল প্রশাসন, রেজিস্ট্রার অফিস ও আইসিটি সেন্টার থেকে পাওয়া তালিকার ভিত্তিতে খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যারা অযোগ্য, তাদের নাম বাদ দিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে চিঠি দেওয়া হবে। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগেই সংশোধন সম্পন্ন করা হবে।’