চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ বছর পর আগামীকাল বুধবার (১৫ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬ জন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে ওএমআর ব্যালটের মাধ্যমে। এবারের নির্বাচন পরিচালনায় রয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ১৫ সদস্যের একটি কমিটি।
নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা
চাকসু নির্বাচনে মোট পদ ২৬টি। এসব পদে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। এর মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ৩৬৮ জন এবং নারী প্রার্থী ৪৭ জন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে প্রার্থী ২৪ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ২২ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে রয়েছেন ২১ জন।
এ ছাড়া বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাহিত্য, ক্রীড়া, সমাজসেবা, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, গবেষণা ও মানবাধিকারসহ নানা বিভাগের মোট ৩৫১ প্রার্থী। ৫টি সিনেট সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮৫ জন প্রার্থী।
হল ও হোস্টেলে সংসদ নির্বাচন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি আবাসিক হল ও শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে হল এবারের সংসদ নির্বাচন। প্রতিটি হলে ১৪টি পদ এবং হোস্টেলে ১০টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। মোট ২০৬টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪৯৩ জন। এর মধ্যে ৯টি ছাত্র হলের প্রার্থী ৩৫০ জন এবং ৫টি ছাত্রী হলের প্রার্থী ১২৩ জন।
ভোটকেন্দ্র ও ভোট সংখ্যা
চাকসুতে মোট ভোটকেন্দ্র পাঁচটি ভবনে স্থাপন করা হয়েছে- আইটি ভবন, শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবন, বিজ্ঞান অনুষদ ভবন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস ভবন এবং ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন।
সবচেয়ে বেশি ভোট পড়বে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে- ৭,০৭৩ জন ভোটার। এরপর ড. ইউনূস ভবনে ৬,৬০৬, শহীদ হৃদয় চন্দ্র ভবনে ৫,২৬৩, বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ৪,৫৩৮ এবং আইটি ভবনে ৪,০৩৬ ভোটার রয়েছেন।
প্যানেল ও প্রার্থিতা
এবারের নির্বাচনে মোট ১৩টি আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ প্যানেল অংশ নিচ্ছে। অংশগ্রহণকারী সংগঠনের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ও অরাজনৈতিক শিক্ষার্থী জোট।
উল্লেখযোগ্য প্যানেলগুলোর মধ্যে আছে- ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’, ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’, ‘দ্রোহ পর্ষদ’, ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’, ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’, ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ এবং ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’।
চাকসু নির্বাচনের ইতিহাস
১৯৭০ সালের প্রথম চাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং জিএস হন ছাত্রলীগের আবদুর রব।
১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন চাকসু জিএস আবদুর রব।
১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় চাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের শামসুজ্জামান হীরা ভিপি এবং জাসদ ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না জিএস নির্বাচিত হন।
১৯৭৪ সালের তৃতীয় চাকসু নির্বাচনে জাসদ ছাত্রলীগের এস এম ফজলুল হক ভিপি ও গোলাম জিলানী চৌধুরী জিএস নির্বাচিত হন।
১৯৭৯ সালের চতুর্থ চাকসু নির্বাচনে ভিপি হন জাসদ ছাত্রলীগের মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী এবং জিএস হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের জমির চৌধুরী।
১৯৮১ সালে চাকসুর পঞ্চম নির্বাচনে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সে সময়ের নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার।
১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ চাকসু নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্রার্থী জাতীয় ছাত্রলীগের নাজিম উদ্দিন ভিপি নির্বাচিত হন। আর জিএস নির্বাচিত হন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আজিম উদ্দিন আহমদ।
প্রস্তুতি ও ভোট গণনা
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ব্যালট পেপারে নিরাপত্তা কোড ব্যবহার করা হয়েছে যাতে জাল ব্যালট ঠেকানো যায়। ভোটগ্রহণ শেষে গণনা করা হবে মেশিনের মাধ্যমে। ফল ঘোষণা করা হবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে।
কমিশনের সদস্য সচিব এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ‘নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’