ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫

ফিলিস্তিনে নিহত শিশুদের নাম লেখা টি-শার্ট পরে কানে হাঁটলেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম
পরিচালক ইউজিন জারেকি ও একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ছবি- সংগৃহীত

‘দ্য সিক্স বিলিয়ন ডলার ম্যান’ - নিজের জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত এই তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী উপলক্ষে ২০২৫ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে হাজির হন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। 

কিন্তু লাল গালিচায় তার উপস্থিতি শুধু চলচ্চিত্র নয়, মুহূর্তেই রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন; কারণ অ্যাসাঞ্জ সেই মুহূর্তে পরেছিলেন একটি সাদা টি-শার্ট, যাতে তিনি গাজার যুদ্ধের নির্মমতা তুলে ধরা হয়।

টি-শার্টটিতে ২০২৩ সালের পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪৯৮৬ জন ফিলিস্তিনি শিশুর নাম লেখা ছিলো। টি-শার্টের পেছনে বড় করে লেখা ছিল - ‘ইসরায়েলকে থামান’। 

তিনি জমকালো এই ফিল্ম উৎসবে বিশ্বসেরা তারকাদের সামনে একধরনের নীরব প্রতিবাদ জানান। যাতে প্রতিধ্বনিত হয় - ‘গাজায় শিশুদের হত্যা থামাও’।

৪৯৮৬ জন নিহত ফিলিস্তিনি শিশুর নাম লেখা অ্যাসাঞ্জের টি-শার্টের সামনের অংশ। ছবি - সংগৃহীত  

এক দশকের বেশি সময় রাজনৈতিক আশ্রয়, কারাবাস ও আইনি লড়াইয়ের পর ২০২৪ সালে মুক্তি পান অ্যাসাঞ্জ। সেই মুক্তির পর এই প্রথম কোনো বড় আন্তর্জাতিক আয়োজনে প্রকাশ্যে আসেন তিনি। 

এই উপলক্ষে অ্যাসাঞ্জ কান উৎসবে আসেন আমেরিকান পরিচালক ইউজিন জারেকি নির্মিত তথ্যচিত্র ‘দ্য সিক্স বিলিয়ন ডলার ম্যান’ - এর ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারে। 

পরিচালক ইউজিন জারেকির সঙ্গে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ছবি - সংগৃহীত। 

তথ্যচিত্রটিতে রয়েছে অ্যাসাঞ্জের রাজনৈতিক জীবন, গোপন নথি ফাঁসের নেপথ্য এবং তার বিরুদ্ধে চলা বহুবছরের আইনি যুদ্ধের অজানা সব মুহূর্তের ফুটেজ।

একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উৎসব সংশ্লিষ্ট একজন মন্তব্য করেন, ‘এ বছরের কান চলচ্চিত্র উৎসবের সবচেয়ে তীব্র ও মানবিক বার্তাটি এসেছে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের টি-শার্ট থেকে।’

গাজা উপত্যকার বাস্তবতা বরাবরই অস্বস্তিকর ও হৃদয়বিদারক। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে ১৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শিশু। 

অথচ এই শিশুদের নাম ও মুখগুলো আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রায়শই উপেক্ষিত থাকে। অ্যাসাঞ্জ যেন সেই ‘নামহীন’ শিশুদের নাম বিশ্বমঞ্চে ফিরিয়ে এনে চিৎকার করে বললেন - ‘ওরা ছিল, আছে, ওদের কথা মনে রাখো।’

সহধর্মিনী স্টেলা মরিসের সঙ্গে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ছবি - সংগৃহীত 

অ্যাসাঞ্জের এই প্রতিবাদ একা নয়। ২০২৫ সালের কান উৎসবজুড়েই দেখা গেছে ফিলিস্তিনের পক্ষে এক অনন্য একাত্মতা। 

অনেক তারকা ও নির্মাতা কেফিয়েহ পরে হাজির হন, কেউ কেউ বুকের ওপর ফিলিস্তিনি পতাকার ব্যাজ, আবার কেউবা প্রকাশ্যে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন। 

অ্যাসাঞ্জের টি-শার্টের পেছনে লেখা ‘ইসরায়েলকে থামান’। ছবি - সংগৃহীত 

উৎসবটি নিজেও এবার কয়েকজন নিহত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে একাধিক সেশন আয়োজন করেছে।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এই মুহূর্তে হয়তো মুক্ত, কিন্তু গাজার শিশুরা আর কখনও ফিরবে না। অ্যাসাঞ্জ যেন সেই অনুপস্থিত শিশুদের কণ্ঠস্বর হয়ে উৎসবের লাল গালিচায় দাঁড়িয়েছিলেন - নীরব অথচ অসামান্য এক প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে।