ঢাকা বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫

লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন অজি অসবর্ন

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ১২:৫৫ পিএম
‘দ্য প্রিন্স অব ডার্কনেস’খ্যাত হেভি মেটালের জনক অজি অসবর্ন। ছবি - সংগৃহীত

দুই সপ্তাহ আগেও তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আয়রন ম্যান!’ কিন্তু ভক্তদের পাগল করা সেই কণ্ঠ আজ আর নেই। মঙ্গলবার সকালে পরিবারের সান্নিধ্যে থেকেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন ব্রিটিশ হেভি মেটাল কিংবদন্তি, ব্ল্যাক সাবাথ ব্যান্ডের মূল কণ্ঠশিল্পী অজি অসবর্ন। 

তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন পরিবার-পরিজনের ভালোবাসায় ঘেরা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট না হলেও বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন তিনি।

মাত্র দুই সপ্তাহ আগে, ৫ জুলাই নিজের শহর বার্মিংহামের ভিলা পার্ক স্টেডিয়ামে আয়োজিত ‘ব্যাক টু দ্য বিগিনিং’ কনসার্টে জীবনে শেষবারের মতো মঞ্চে ওঠেন অসবর্ন। সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন প্রজন্মের প্রখ্যাত সব হেভি মেটাল ব্যান্ড ও তারকা। ব্ল্যাক সাবাথের প্রতিষ্ঠাতা চার সদস্য- অজি, গিজার বাটলার, টনি আয়োমি ও বিল ওয়ার্ড প্রায় ২০ বছর পর আবার একসঙ্গে গান করেন সেই বিদায়ী আয়োজনে।

দর্শকের ভালোবাসা ও আবেগে ভরপুর সেই রাতে অসবর্ন বলেছিলেন, ‘এই ছয় বছরের কষ্ট আর যন্ত্রণার পর আজকের মতো শান্তি কোথাও পাইনি।’ আজ চলে যাবার সময় কি তিনি এর থেকেও বেশি শান্তিতে ছিলেন? উত্তরটা হয়তো অজানাই থেকে যাবে।

১৯৪৮ সালের ৩ ডিসেম্বর বার্মিংহামের এস্টনে জন্ম নেওয়া অজির শৈশব ছিল বিষণ্নতায় মোড়া। দারিদ্র্যের পাশাপাশি ১১ বছর বয়সে যৌন নির্যাতনের শিকার হন তিনি। স্কুলে পড়াশোনায় পিছিয়ে থাকলেও গানের প্রতি প্রেম জাগে দ্য বিটলস ব্যান্ড শুনে। কসাইখানা থেকে কারখানা-পেটের দায়ে নানা কাজ করতে হয়েছে তাকে। তবে ১৯৬৮ সালে ব্যান্ড ব্ল্যাক সাবাথের হাত ধরে শুরু হয় রক মিউজিকের ইতিহাসে তার বিস্ফোরণ।

‘প্যারানয়েড’, ‘ওয়ার পিগস’, ‘আইরন ম্যান’ কিংবা ‘মাস্টার অব রিয়েলিটি’-একটির পর একটি অ্যালবাম দিয়ে সত্তরের দশকে ব্রিটিশ র সংগীতে এক অন্যরকম বিপ্লব আনেন অজি ও তার ব্যান্ড। হেভি মেটালের জন্মকথা বললে সবার আগে উঠে আসে ব্ল্যাক সাবাথের নাম। এই ব্যান্ডই প্রথম রক সংগীতে আঁধার, ভয় আর শিল্পিত শব্দবিস্ফোরণের মিশেল ঘটায়। 

অজি অসবর্নের অদ্বিতীয় গলা, গিজার বাটলারের গভীর লিরিক, টনি আয়োমির ভারী গিটার রিফ- সব মিলিয়ে ব্ল্যাক সাবাথই গড়ে তোলে হেভি মেটালের আদিরূপ। তাদের ‘প্যারানয়েড’ ও ‘ওয়ার পিগস’-এর মতো গান বিশ্বজুড়ে তরুণদের এক নতুন সংগীতচর্চার দিকে টেনে আনে। বহু বিখ্যাত শিল্পীর মতে, ব্ল্যাক সাবাথ না থাকলে হেভি মেটাল নামের ঘরানারই জন্ম হতো না। 

গানের পাশাপাশি তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড তাকে ঘিরে গড়ে তোলে রহস্যময় এক রকস্টার ইমেজ। কখনো মঞ্চে বাদুড়ের মাথা কামড়ানো, কখনো মিটিংয়ে শান্তির প্রতীক পায়রা ছুড়ে মারার বদলে তাদের মাথাও চিবিয়ে খাওয়া- অজির ইতিহাস বিস্ময়ে ঠাসা। এই রহস্যময়তা তাকে এনে দিয়েছে ‘দ্য প্রিন্স অব ডার্কনেস’-এর তকমা। 

শুধু ব্যান্ড নয়, নিজের একক ক্যারিয়ারেও অজি ছিলেন সমান জনপ্রিয়। ১৩টি একক অ্যালবাম, যার মধ্যে ‘ব্লিজার্ড অব অজ’ আর ‘পেশেন্ট নাম্বার ৯’ জায়গা করে নিয়েছে শ্রোতাদের হৃদয়ে। ২০০৩ সালে মেয়ে কেলির সঙ্গে গাওয়া গান ‘চেইঞ্জেস’ পৌঁছে যায় চার্টের শীর্ষে। 

এল্টোন জনের মতো কিংবদন্তির সঙ্গে মিলে গেয়েছেন ‘অরডিনারি ম্যান’। এই গানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সাধারণ হিসেবে মরতে চাই না’। আজ তার কোটি কোটি ভক্তই হয়তো চোখের জলে জানিয়ে দিলেন, ‘আপনি সত্যিই অসাধারণ’।  

ব্যক্তিজীবনে ছিলেন উত্থান-পতনের ঘূর্ণিপাকে। ১৯৮২ সালে স্ত্রী শ্যারনকে গলায় চেপে ধরার ঘটনায় গ্রেপ্তার হন তিনি, যদিও পরবর্তীতে দাম্পত্য জীবনে আবার মিল খুঁজে পান তারা। তাদের তিন সন্তান- এইমি, কেলি ও জ্যাক। পর্দার বাইরে তাদের দেখা মিলেছিল জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘দ্য অসবর্নস’-এ, যা সারা দুনিয়ার টেলিভিশন দর্শকের মন জয় করে।

জীবনের শেষ পর্বে শারীরিক অসুস্থতা ও অস্ত্রোপচারের মধ্যেও তিনি থেমে যাননি। পারকিনসনের মতো জটিল রোগ ও স্পাইন সার্জারির পরও শেষবার ভক্তদের সামনে আসেন, গান করেন, বিদায় জানান নিজের শহরেই।

তার মৃত্যুর খবরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে শোক। এলটন জন অজিকে স্মরণ করেন ‘রক দেবতা ও একজন বিশুদ্ধ কিংবদন্তি’ হিসেবে। গিটারিস্ট টনি আয়োমি বলেন, ‘অজির মতো আর কেউ নেই।’ গিজার বাটলার লেখেন, ‘শেষবার একসঙ্গে গাইতে পেরেছিলাম, এটা ভেবেই শান্তি পাই।’ আর বিল ওয়ার্ড আবেগঘন বার্তায় বলেন, ‘বিদায় নয়, চিরকৃতজ্ঞতা।’

হেভি মেটালের আলো-আঁধারির মাঝে যিনি নিজের মঞ্চ বানিয়ে নিয়েছিলেন, সেই অজি অসবর্ন আজ আর নেই। কিন্তু তার কণ্ঠ, তার গান, তার বিদ্রোহ- চিরকাল বেঁচে থাকবে কোটি ভক্তের মনে।

তথ্যসূত্র: এএফপি, বিবিসি, গার্ডিয়ান, দ্য মিরর, রোলিং স্টোন