মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৫, ১১:১৯ এএম

উচ্চ রক্তচাপ: কারণ, নিয়ন্ত্রণ এবং সুস্থ থাকতে করণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৫, ১১:১৯ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো  এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা, যা ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক, কিডনি এবং চোখের রক্তনালীর জন্য এটি ক্ষতিকর। এটি বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষের জন্য একটি নীরব বিপদ, কারণ অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো সুস্পষ্ট উপসর্গ দেখা যায় না। তবে সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি বিকল হওয়া এবং অন্যান্য জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।  

ভালো খবর হলো, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঠিক চিকিৎসা, জীবনধারায় পরিবর্তন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক চর্চার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এই লেখায় আমরা উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণগুলো, কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, ওষুধ ও চিকিৎসকের পরামর্শের গুরুত্ব, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনাকে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন পেতে সাহায্য করবে।

উচ্চ রক্তচাপ কী?

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তনালীগুলোর দেওয়ালে রক্তের চাপ দীর্ঘ সময় ধরে খুব বেশি থাকে। এই অতিরিক্ত চাপের কারণে হৃদপিণ্ডকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, যা হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনির সমস্যা এবং অন্যান্য মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়।  

রক্তচাপ পরিমাপ বোঝার উপায়

রক্তচাপ মিলিমিটার মার্কারি (mmHg) এককে মাপা হয় এবং এটি দুটি সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়:  

সিস্টোলিক চাপ (উপরের সংখ্যা)– যখন হৃদপিণ্ড রক্ত পাম্প করে, তখন রক্তনালীগুলোর চাপ।  
ডায়াস্টোলিক চাপ (নিচের সংখ্যা)– যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে, তখন রক্তনালীগুলোর চাপ।  

স্বাভাবিক এবং উচ্চ রক্তচাপের পরিসীমা

যদি রক্তচাপ ১৮০/১২০ mmHg-এর বেশি হয়, তাহলে এটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি, এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।  

উচ্চ রক্তচাপ কেন বিপজ্জনক?

উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালী ও বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন:  

  • হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাক – উচ্চ রক্তচাপ হৃদপিণ্ডকে বেশি পরিশ্রম করায়, যা হার্ট ফেইলিউর হতে পারে।  
  • স্ট্রোক– মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে যেতে পারে বা ব্লক হয়ে যেতে পারে।  
  • কিডনির ক্ষতি– কিডনি ঠিকমতো বর্জ্য পরিশোধন করতে পারে না।  
  • দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া– চোখের রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।  
  • অ্যানিউরিজম– রক্তনালী দুর্বল হয়ে গিয়ে ফেটে যেতে পারে, যা জীবনহানির কারণ হতে পারে।  

উচ্চ রক্তচাপের কারণ

উচ্চ রক্তচাপের বেশ কয়েকটি সাধারণ কারণ রয়েছে, যেমন:  

  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস– অতিরিক্ত লবণ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও প্রক্রিয়াজাত খাবার রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে।  
  • শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা– ব্যায়ামের অভাবে হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালী দুর্বল হয়ে যায়।  
  • অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা– অতিরিক্ত ওজন হৃদপিণ্ডের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।  
  • মানসিক চাপ– দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেস রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।  
  • ধূমপান ও মদপান– এগুলো রক্তনালী সংকুচিত করে এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।  
  • পারিবারিক ইতিহাস– যদি পরিবারের কারও উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তাহলে ঝুঁকি বেশি থাকে।  
  • অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা– ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা এবং হরমোনজনিত অসুখ উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।  
  • বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে পরিবর্তন– বয়স বাড়ার সঙ্গে রক্তনালী কম নমনীয় হয়, ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।  

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের উপায়

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সঠিক ওষুধ গ্রহণ, নিয়মিত চেকআপ ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করা জরুরি।  

নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করুন

আপনার রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করুন যাতে কোনো পরিবর্তন হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।  

ডাক্তার প্রেসক্রাইব করা ওষুধ নিয়মিত খান
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ করা জরুরি।
- ওষুধ বাদ দিলে বা অনিয়ম করলে রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে, যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।  

নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন 
- ডাক্তারকে নিয়মিত দেখান এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না তা যাচাই করুন।  
- নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ পরিবর্তন বা বন্ধ করা বিপজ্জনক হতে পারে।  

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জীবনযাত্রার পরিবর্তন

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।  

নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং বা সাঁতার।  
- যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।  

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- শরীরের ওজন ৫-১০% কমালে রক্তচাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে।
- ক্র্যাশ ডায়েট না করে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।

মানসিক চাপ কমান
- মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা শখের কাজে ব্যস্ত থাকুন।  
- অপ্রয়োজনীয় মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন।  

ধূমপান ও মদপান পরিহার করুন
- ধূমপান রক্তনালী সংকুচিত করে, যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।  
- অ্যালকোহল গ্রহণ কমানো উচিত– পুরুষদের জন্য দিনে সর্বোচ্চ ২ গ্লাস এবং মহিলাদের জন্য ১ গ্লাস পর্যন্ত।  

পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
- প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।
- পর্যাপ্ত ঘুম না হলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়।  

উচ্চ রক্তচাপে উপকারী খাবার

একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কিছু খাবার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, আবার কিছু খাবার পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রক্তনালীগুলোকে শিথিল করে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এই লেখায় আমরা উচ্চ রক্তচাপে উপকারী কিছু খাবার সম্পর্কে জানব, যা আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।

  • ফল ও সবজি– কলা, কমলা, পালংশাক, বিট রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।  
  • সম্পূর্ণ শস্যযুক্ত খাবার– ব্রাউন রাইস, ওটস এবং গমের রুটি ভালো বিকল্প।  
  • লো-ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবার– কম চর্বিযুক্ত দই ও দুধ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।  
  • চিকেন, মাছ ও ডাল– তেল ছাড়া রান্না করা মাছ, মুরগির মাংস, ডাল, ছোলা ইত্যাদি ভালো প্রোটিন সরবরাহ করে।  
  • বাদাম ও বীজ– কাজু, আমন্ড, আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড ও চিয়া সিড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।  
  • অলিভ অয়েল ও অ্যাভোকাডো– হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।  
  • ডার্ক চকলেট– অল্প পরিমাণে গ্রহণ করলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়।  

উচ্চ রক্তচাপে ক্ষতিকর খাবার

  • অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার– প্রসেসড খাবার, প্যাকেটজাত চিপস, আচার, প্রক্রিয়াজাত মাংস এড়িয়ে চলুন।  
  • অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টি পানীয়– চিনি বেশি খেলে ওজন বাড়ে, যা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।  
  • ভাজা ও চর্বিযুক্ত খাবার– লাল মাংস, ফাস্ট ফুড এবং ভাজাপোড়া খাবার কম খান।  
  • ক্যাফেইন ও এনার্জি ড্রিংকস– এটি সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।  
  • অ্যালকোহল বেশি পরিমাণে পান করা– এটি হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।  

উচ্চ রক্তচাপ একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও নিয়মিত চিকিৎসা, ওষুধ গ্রহণ এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছোট ছোট পরিবর্তনই আপনাকে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে।

নিজের ও প্রিয়জনের যত্ন রাখুন, সুস্থ থাকু, ভালো থাকুন! 

আরবি/এসএস

Shera Lather
Link copied!