ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫

গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৫, ১১:৫৬ এএম
কোয়েল পাখির ডিম। ছবি: সংগৃহীত

ডিমের মধ্যে কোয়েল পাখির ডিম পুষ্টিগুণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। কোয়েল পাখির ডিম আকার দেখে বোকা বনে যাবেন না! কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও পুষ্টিকর। মুরগির ডিম পৃথিবীতে বহুল অংশে প্রচলিত হলেও কোলেস্টেরলের কারণে অনেকেই খেতে পারেন না। এছাড়া মুরগির ডিমে আছে বাড়তি হৃদরোগের ঝুঁকি। কোয়েলের ডিম মা এবং শিশুর জন্য উপকারি। একারণে দেশে কোয়েলের চাষ বাড়ছে এবং সেইসাথে বাড়ছে কোয়েলের ডিমের চাহিদা।

কোয়েলের ডিমের পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েলের ডিমে থাকে (আনুমানিক):

ক্যালোরি: প্রায় ১৫৮ ক্যালোরি।
প্রোটিন: ১৩ গ্রাম।
ফ্যাট (চর্বি): ১১ গ্রাম। এর মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ৩.৫ গ্রাম।
কোলেস্টেরল: প্রায় ৮৪৪ মিলিগ্রাম।
কার্বোহাইড্রেট: ১ গ্রাম।

ভিটামিন ও খনিজ: কোয়েলের ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ, বি২ (রিবোফ্ল্যাভিন),বি১২ ,ফসফরাস, আয়রন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক। 

কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম

কোয়েলের ডিম সাধারণত সেদ্ধ, ভাজা বা রান্না করে খাওয়া হয়। ডিম ভাজার সময় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ অতিরিক্ত তেল দিলে ডিমের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। তবে অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এটি অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এবং ফ্যাটের কারণে ক্ষতিকর হতে পারে।

কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায়?


৬ মাস থেকে ১ বছর: ১টি ছোট ডিম যথেষ্ট। ১ বছর থেকে ৩ বছর: প্রতিদিন ১-২টি ডিম খাওয়ানো যেতে পারে। ৩ বছরের বেশি: দৈনিক ২-৩টি ডিম খাওয়া নিরাপদ এবং পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সহায়ক।

গর্ভবতী নারী কি কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারবে?

এই ডিমগুলি মা এবং শিশুর জন্য ভাল। কোয়েলের ডিম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। এই ডিমগুলি হল একটি ক্ষার তৈরির পণ্য এবং এটি পেটের আলসার এবং গ্যাস্ট্রাইটিসের জন্য একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার।


কোয়েল ডিমের উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: কোয়েল ডিমে ভিটামিন এ, সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। সংক্রমণ, ফ্লু, ও ঠান্ডা প্রতিরোধে সহায়ক।

রক্তশূন্যতা দূর করে: এতে উচ্চমাত্রার আয়রন ও ভিটামিন বি১২ রয়েছে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কার্যকর।

মস্তিষ্কের গঠন ও স্মৃতিশক্তি উন্নত করে: কোয়েল ডিমে কোলিন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে, যা স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম সচল রাখে এবং স্মৃতি ও মনোযোগ শক্তি বাড়ায়।

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে: ভিটামিন এ ও অ্যামিনো অ্যাসিড চোখের কোষ রক্ষা করে এবং চোখের ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে।

হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে: মাপা পরিমাণে সঠিক উপায়ে গ্রহণ করলে এতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা দেয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

অ্যালার্জি প্রতিরোধে সহায়ক: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কোয়েল ডিমে থাকা ওভোমুকয়েড প্রোটিন অ্যালার্জি প্রতিরোধে কাজ করতে পারে।

ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: এতে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের জেল্লা বাড়ায় এবং চুলের গোড়া শক্ত করে।

কোয়েল ডিম পুষ্টিকর হলেও অতিরিক্ত বা অনিয়মিত সেবনের ফলে কিছু অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

কোয়েল ডিমের অপকারিতা

উচ্চ কোলেস্টেরল: কোয়েল ডিমে প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৮৪৪ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, যা একটি মুরগির ডিমের তুলনায় অনেক বেশি। উচ্চ কোলেস্টেরলবিশিষ্ট খাবার অতিরিক্ত খেলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং আর্টারি ব্লক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

অ্যালার্জির ঝুঁকি: যদিও অনেকে মনে করেন কোয়েল ডিম অ্যালার্জি কমায়, তবে কারও কারও দেহে ওভোমুকয়েড ও অন্যান্য প্রোটিনের কারণে অ্যালার্জি হতে পারে।  লক্ষণ: চুলকানি, ফুসকুড়ি, বমি বা শ্বাসকষ্ট।

অতিরিক্ত খেলে হজমের সমস্যা: প্রতিদিন অতিরিক্ত কোয়েল ডিম খাওয়ার ফলে গ্যাস, পেট ফাঁপা, বদহজম বা অম্বলের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যারা চর্বিযুক্ত খাবারে সংবেদনশীল।

বয়স ও শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: যাদের কিডনি সমস্যা বা হরমোনজনিত রোগ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ ক্ষতিকর হতে পারে।

অপরিচ্ছন্ন বা আধা সিদ্ধ ডিম খেলে সংক্রমণের ঝুঁকি: কোয়েল ডিম ঠিকমতো সিদ্ধ না করলে সালমোনেলা বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।