ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ কয়েকটি সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা হাইকোর্টের

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরানো হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ। ছবি- সংগৃহীত

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ ২০১১ সালের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বেশ কয়েকটি বিধানকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ১৩৯ পৃষ্ঠার এই রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

এই রায়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছর ১৭ ডিসেম্বর দুটি পৃথক রিট নিষ্পত্তি করে রায় দেন।

রায় অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত বিধান, সংবিধান স্থগিত ও মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনের বিধান (৭ ক ও ৭ খ), মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে হাইকোর্টের ক্ষমতা সীমিত করার ধারা (৪৪(২)) এবং গণভোটের বিধান বাতিলের অংশ বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে সংবিধানে গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনার পথ খুলেছে।

তবে সংসদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির সিদ্ধান্তটি পুনর্বহাল করতে হলে ২০১১ সালে প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে দেওয়া "তত্ত্বাবধায়ক অবৈধ" ঘোষণার রায়ের পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন বলে রিটকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের শুনানি এখনও বাকি।

হাইকোর্ট আরও বলেছে, বাকি কিছু বিধান সংশোধনের দায়িত্ব আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সংসদ চাইলে এই বিধানগুলো পরিবর্তন, পরিমার্জন বা সংশোধন করতে পারবে।

এর আগে, ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রুল জারি করা পৃথক দুটি রিটের ওপর শুনানি শেষ হয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ২০১১ সালের ৩০ জুন সংসদে পাস হয় এবং ৩ জুলাই রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে কার্যকর হয়।

ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ছাড়াও বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৫০-এ উন্নীতকরণ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয় চার মূলনীতি পুনঃস্থাপন, রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত করা এবং নির্বাচন সংক্রান্ত সময়সীমায় পরিবর্তন আনা হয়।

এই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক। পরে নওগাঁর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও পৃথক রিট করেন।

রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া ও ফিদা এম কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদ উদ্দিন।

রুল সমর্থনে (ইন্টারভেনার) হিসেবে যুক্ত হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, গণফোরামসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা।

তাদের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবীরা জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, সুব্রত চৌধুরী, ইশরাত হাসান, শিশির মনির, মো. বদরুদ্দোজা, রুহুল কুদ্দুস কাজল, এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক, মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী, এবিএম হামিদুল মিসবাহ, মোস্তফা আসগর শরীফি, সোনিয়া জামান খান ও আবদুল মোমেন চৌধুরী।

এই রায়ের ফলে সংবিধানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা পুনর্বিবেচনার সুযোগ তৈরি হলো, যা আগামী দিনের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।