সুস্থ থাকার অন্যতম শর্ত হচ্ছে নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করা। আর অবশ্যই এমন খাবার খেতে হবে যেগুলো শরীরের জন্য উপকারী। এমনই একটি উপকারী খাবার টক দই। সরাসরি দুধ খেতে যাদের সমস্যা হয়, তারা নির্দ্বিধায় এটি খেতে পারেন। দইতে ক্যালশিয়াম এবং প্রোটিনের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে, যা অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে ভীষণ জরুরি। পুষ্টিবিদদের মতে, দুধের সমান পুষ্টি পুরোটাই মেলে টক দইয়ে।
গাজরের পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম টক দইয়ে থাকে (আনুমানিক):
শক্তি: ৬০–৮০ কিলোক্যালরি
প্রোটিন: ৩–৫ গ্রাম
ফ্যাট: ২–৪ গ্রাম।
কার্বোহাইড্রেট: ৪–৬ গ্রাম।
ক্যালসিয়াম: ১২০–১৫০ মি.গ্রা।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া: ল্যাকটোব্যাসিলাস, বিফিডোব্যাকটেরিয়াম ইত্যাদি।
প্রতিদিন দই খেলে কি হয়?
দই একটি পুষ্টিকর খাবার যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হজমশক্তি এবং ত্বকের স্বাস্থ্যে সহায়তা করে। দইয়ের উপকারিতা ওজন হ্রাস, হার্টের স্বাস্থ্য এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণকেও উৎসাহিত করে।
কখন টক দই খাওয়ার উপযুক্ত সময়?
খালি পেটে টক দই খেলে অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়ে। এর জেরে পাচনতন্ত্র উন্নত হয় এবং খাবার হজমে কোনও সমস্যা দেখা দেয় না। পেট ফাঁপার সমস্যা কমে এবং বাওয়েল মুভমেন্ট সচল থাকে। সকালবেলা খালি পেটে টক দই খাওয়া যায়।
টক দই একটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার, যা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় এবং এতে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
টক দইয়ের উপকারিতা
হজম শক্তি বৃদ্ধি: টক দইয়ে উপস্থিত প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হজম ব্যবস্থা সুস্থ রাখে। এটি অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়, যার ফলে হজমে সহায়তা হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি, গ্যাস সমস্যা কমে যায়।
হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য: টক দইয়ে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড়ের গঠন ও শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি শিশুদের হাড়ের উন্নয়ন ও বয়স্কদের হাড়ের সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: টক দইয়ে উপস্থিত প্রোবায়োটিকস এবং ভিটামিন বি১২ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষা করে এবং শরীরকে শক্তিশালী রাখে।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারি: টক দইয়ের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ ত্বককে সুস্থ রাখে। এটি ত্বকের কোষ পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে, ফলে ত্বক হয়ে ওঠে মসৃণ ও উজ্জ্বল। এছাড়া, টক দই চুলে ব্যবহার করলে খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে সহায়তা করে: টক দইয়ের প্রোটিন ও কম ক্যালরি থাকা শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তৃপ্তি দেয়, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: টক দইয়ে উপস্থিত প্রোবায়োটিকস এবং ক্যালসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: টক দইয়ে উপস্থিত প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে পারে, ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডিটক্সিফিকেশন: টক দই শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে এবং শরীরকে পরিষ্কার রাখে।
গর্ভাবস্থায় টক দইয়ের উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সঠিক পুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং টক দই একটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য যা গর্ভবতী মায়ের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এটি অনেক পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে, যা গর্ভাবস্থার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
যদিও টক দই একটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি তিরিক্ত খেলে কিছু অপকারিতা হতে পারে।
টক দইয়ের অপকারিতা
অতিরিক্ত খেলে পেটের সমস্যা: টক দই অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে পেটে গ্যাস, অ্যাসিডিটি বা পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে। এটি এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া-র কারণও হতে পারে, বিশেষত যাদের হজম সমস্যা আছে।
ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স: যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স (দুধের শর্করা হজমের সমস্যা) রয়েছে, তাদের জন্য টক দই খাওয়া কঠিন হতে পারে। এতে পেটের সমস্যা, যেমন পেটব্যথা, গ্যাস, ডায়রিয়া বা মলের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে: কিছু মানুষের দুধের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে, যার ফলে টক দই খাওয়ার পর ত্বকে র্যাশ, গা গরম হওয়া বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা হতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি: বাজারে পাওয়া কিছু টক দইয়ের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি ও কৃত্রিম উপাদান থাকতে পারে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কিছু সাবধানতা: গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত টক দই খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এটি কিছু গর্ভবতী মায়ের জন্য অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিছু মায়ের পেটে টক দই ভালো না লাগতে পারে, যার ফলে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়।
পেটের তাপমাত্রা বাড়াতে পারে: টক দই বেশ ঠান্ডা খাবার এবং কিছু লোকের জন্য এটি পেটের তাপমাত্রা বাড়াতে পারে, যা অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
কিডনির রোগীদের জন্য সাবধানতা: যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তাদের জন্য টক দইয়ে থাকা ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম অতিরিক্ত হয়ে যেতে পারে। এজন্য তাদের জন্য টক দই খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 
                             
                                    
 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন