‘আমার মা ভালো থাকবে, আমার আব্বাকে আর কষ্ট করতে দেব না’- এটাই ছিল রাজু আহমেদের স্বপ্ন। কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই থেমে গেল রাজুর জীবন। পুলিশের গুলিতে ঝরে গেল মাগুরার এই তরুণের প্রাণ।
রাজু আহমেদ (২৬), মাগুরা সদর উপজেলার আজমপুর গ্রামের মো. আবু কালাম মোল্লার ছেলে। তিনি ছিলেন তিন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। স্থানীয় মাগুরা আদর্শ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী। পরিবার চালাতে তিন মাস আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ী এলাকায় জননী কুরিয়ার সার্ভিসে মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নিয়েছিলেন।
১৯ জুলাইয়ের বিভীষিকা
গত বছরের ১৯ জুলাই, ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাঁশখালী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন রাজু।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, পুলিশ প্রথমে তার পায়ে গুলি করে, এরপর বন্দুক ঠেকিয়ে পেটে গুলি করে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান রাজু।
পরিবারের দাবি, রাজু কোনো সহিংসতায় জড়িত ছিলেন না। তিনি আন্দোলনের সময় আশপাশেই ছিলেন মাত্র। পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ তাদের।
এক স্বপ্নবান তরুণের গল্প
রাজুর মা নাসিমা খাতুন এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাঁটুর নিচে সাতটি প্লেট নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
রাজু সবসময় বলতেন, ‘আম্মা, আমি তোমার চিকিৎসা করাব। আব্বা আর জমিতে খাটতে পারবে না।’
মৃত্যুর আগের দিন ছোট বোন সিমাকে ফোন করে রাজু বলেছিলেন, ‘আব্বাকে পাঁচ হাজার টাকা দে, বেতন পেলে দিয়ে দেব। আব্বাকে চিল্লায় পাঠাব, আর কাজ করতে দেব না।’
রাজুর পাসপোর্ট এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নও ছিল তার। কিন্তু সে স্বপ্ন আর বাস্তব হলো না। বেতন পাওয়ার আগেই, বাবা-মাকে সুখ দেওয়ার আগেই রক্তাক্ত নিথর দেহ হয়ে বাড়ি ফিরলেন তিনি।
রাজুর মা শোকে পাথর। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমার ছেলেটা শুধু চাইত আমাদের ভালো রাখতে। ওর শেষ ইচ্ছাটাও পূরণ হলো না।’
রাজুর বাবা মো. আবু কালাম মোল্লা ছেলের ছবি হাতে নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। চোখে অশ্রু আর কণ্ঠে হতাশা, ‘আমার ছেলে সবসময় বলত, আব্বা তুমি কাজ করবা না। আজ ও নেই, আমি কেমনে থাকব?’
রাজুর পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার পর মাগুরা সদর থানার ওসি ফোর্স নিয়ে বাড়িতে এসে হুমকি দেন, যেন তারা মামলা না করেন। বলেন, ‘মামলা করলেও কোনো লাভ হবে না।’