ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫

মাখা ভাত রেখে মিছিলে যান তাহমিদ, ফেরেন লাশ হয়ে

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৫, ১২:২১ পিএম
শহীদ মো. তাহমিদ আবদুল্লাহ। ছবি- সংগৃহীত

গত বছরের ৫ আগস্ট, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে যখন গোটা দেশ উত্তাল, তখন মিরপুরের এক সরল তরুণ, মো. তাহমিদ আবদুল্লাহ, লালশাক দিয়ে মাখা ভাত ফেলে বেরিয়ে পড়েছিলেন বিজয় মিছিলে। ফিরবেন বলে মাকে বলে গিয়েছিলেন, ‘মা, ভাতটা রেখে দাও, এসে খাব।’ কিন্তু তিনি আর ফেরেননি- ফিরেছেন লাশ হয়ে।

শহীদ তাহমিদের যাত্রা

রাজধানীর মিরপুর-২ এলাকায় অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় মিছিলে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন তাহমিদ। সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। দীর্ঘ পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ আগস্ট সকালে শহীদ হন তিনি।

মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন তাহমিদ। প্রতিবাদমুখর ও সচেতন এই তরুণ শুরু থেকেই সহপাঠীদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিতেন।

তাহমিদের মা তানজিল জানান, ‘ছেলের অনুরোধেও তিনি আন্দোলনে যাননি। একবার তাহমিদ রাগ করে বলেছিল, ‘মা, তুমি কখনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করো না, আমাকেও করতে দিতে চাও না।’

বিজয় মিছিলের সময় গোলাগুলির মধ্যে পড়ে যান তাহমিদ। প্রথমে একটি খুঁটির পাশে আশ্রয় নেন। পরে গুলি থেমে গেছে মনে করে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুলি লাগে তার বুকের দু’পাশে।

চিকিৎসকেরা জানান, একটি গুলি ফুসফুস ভেদ করে বের হয়ে যায়, অপরটি শরীরে আটকে ছিল। তার ফুসফুসে তিনটি ছিদ্র ধরা পড়ে।

এর আগে, ৪ আগস্ট মিছিল থেকে ফেরার পথে তাহমিদের পায়ে ছররা গুলি লেগেছিল। ব্যথায় রাতে ঘুম থেকে কুঁকড়ে গেলে মায়ের কাছে বিষয়টি প্রকাশ পায়। স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন তিনি।

তাহমিদের বাবা মো. আবুল হোসেন ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের স্কোরার। তিনি ২০২০ সালে করোনাকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

তাহমিদের মা বলেন, ‘বাবার সঙ্গে বন্ধুর মতো সম্পর্ক ছিল ওর। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের ভার কাঁধে তুলে নিয়েছিল। স্বপ্ন ছিল, পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের দায়িত্ব নেবে।’

তাহমিদের দুই ছোট বোন- ফাতেমা তাসনিম (১৫) ও খাদিজা নুসরাত (৯) পড়ছে মাদ্রাসায়। মা তানজিল এখন মিরপুর সেনপাড়ার পৈতৃক বাড়িতে ভাড়া দিয়ে সামান্য আয় করেন। তাহমিদের দুই পোষা বিড়াল ‘ব্রাউনি বেবি’ ও ‘টাইগার’ এখন তাকে খুঁজে বেড়ায়।

তাহমিদের প্রতিবেশী হাজেরা চৌধুরী বলেন, ‘ছেলেটা খুবই ভদ্র ও হাসিখুশি ছিল। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বাবার মতো বড় করে হেসে তারপর উত্তর দিত।’

মা তানজিল অভিযোগ করে বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে নিতে নিতে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এত রক্তক্ষরণ না হলে হয়তো আমার ছেলেটা বেঁচে যেত।’