‘আব্বা, আমি আর বাঁচমু না। তোমাদের মনের আশা পূরণ করতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিও। আমার ওপর থাইক্কা দাবি ছাইড়া দিয়ো, আব্বা।- এটাই ছিল পুত্র আসিফুর রহমানের শেষ কথা, বাবার কোলে কাতরাতে কাতরাতে বিদায় নেওয়ার আগে।
গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন আসিফুর (১৭)। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে রিকশায় বাবাকে এসব বলে যান তিনি।
জানা যায়, গত বছরের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে মিরপুর ১০ নম্বর চত্বরে ছাত্র-জনতা জড়ো হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুলিশ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সম্মিলিত আক্রমণে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হন আসিফুর।
তার বাবা জানান, ‘পুলাডা কইছিল বন্ধুর সঙ্গে দেখা কইরা আসি। কিছুক্ষণ পর ফোন কইরা কইলো- ‘আব্বু, আমি অ্যাক্সিডেন্ট করছি, তাড়াতাড়ি আইসো।’ তখন গিয়েই দেখি, আমার ছেলে আলোক হাসপাতালের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে।’
আসিফুরকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখান থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং পরে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রিকশায় যাওয়ার সময় আসিফুর তার বাবাকে বলেন, ‘আমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না, আব্বা। আমাকে মাফ করে দিও। আমি আর বাঁচমু না।’
নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে পৌঁছানোর পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাত ৯টা ৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আসিফুরের মা ফজিলা খাতুন মোবাইল বলেন, ‘আমার ছেলে শান্ত স্বভাবের ছিল। বাইক কেনার শখ ছিল, কিন্তু দুর্ঘটনার ভয়ে কিনি নাই। কিন্তু আমার কলিজার টুকরা গুলিতে মারা গেল। সে কোনো দল করত না। আল্লাহ যেন বিচার করেন যারা আমার ছেলেকে মেরেছে।’
আসিফুর ছিলেন ছয় ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। শেরপুরের নালিতাবাড়ীর রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামের সন্তান আসিফ, ঢাকায় বাবা আজমত হোসেনের সঙ্গে থেকে একটি গার্মেন্টসে ১৩ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন।
নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল থেকে মরদেহ আনতে তিন হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হয়। পরে সাড়ে ১২ হাজার টাকায় ট্রাক ভাড়া করে রাত ৩টার দিকে লাশ গ্রামের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। পরদিন সকালে জানাজা শেষে কেরেঙ্গাপাড়া-ফুলপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পরিবারকে সহায়তা হিসেবে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানান আজমত হোসেন।
শহিদ আসিফুর রহমানের পিতা মো. আজমত হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করত না। যাদের গুলিতে সে নিহত হয়েছে, আমি তাদের বিরুদ্ধে বিচার চাই।’
আপনার মতামত লিখুন :