ঢাকা শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫

নতুন সক্রিয় ফাটলরেখা শনাক্ত, সর্বোচ্চ মাত্রায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম
প্রতীকী ছবি।

বাংলাদেশে আরও একটি সক্রিয় ভূগর্ভস্থ ফাটলরেখা (ফল্টলাইন) শনাক্ত করেছে আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল। এই ফাটলরেখা বাংলাদেশের জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে ভারতের কলকাতা পর্যন্ত বিস্তৃত, দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। গবেষণায় দেখা গেছে, এর একটি অংশ ভূমিকম্পপ্রবণ এবং সর্বোচ্চ ৬ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে।

গবেষকরা ফাটলরেখাটিকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। এর এক ভাগে স্বল্প মাত্রার ঝুঁকি, দ্বিতীয় ভাগে উচ্চ মাত্রার ঝুঁকি রয়েছে এবং তৃতীয় ভাগে ঝুঁকি নেই। তবে কোন অংশে ঝুঁকি বেশি বা কম, তা এখন প্রকাশ করা হয়নি। আক্তারুল আহসান জানিয়েছেন, এই গবেষণার বিস্তারিত ফলাফল শিগগিরই আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হবে।

বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আক্তারুল আহসান ও তার দল ২০২৪ সালের মার্চে ‘টেকটোনিক জিওমরফোলজি’ পদ্ধতিতে গবেষণা শুরু করেন এবং সম্প্রতি এটি শেষ হয়েছে। আক্তারুল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমিকম্প বিষয়ে পিএইচডি করছেন, তার সহ-পরামর্শকরা মধ্যে একজন হলেন কলাম্বিয়ার লেমন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরির অধ্যাপক মাইকেল এস স্টেকলার।

গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন ফাটলরেখার জন্ম ৫ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে ইউসিন যুগে। পরে এটি ২ কোটি ৩০ লাখ বছর মায়োসিন যুগে নিষ্ক্রিয় ছিল। ৫৬ লাখ বছর আগে ইন্ডিয়ান ও ইউরেশিয়ান প্লেটের চাপের কারণে মেঘালয়ের পর্বতমালা উঠে আসার সঙ্গে ফাটলরেখাটি পুনরায় সক্রিয় হয়।

ইন্ডিয়ান প্লেট প্রতিবছর ৪৬ মিলিমিটার (৪ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার) করে ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচে ঢুকছে। এই গতির পরিবর্তন ও দিকের পার্থক্যের কারণে ডাউকি ফাটলসহ নতুন ফাটলগুলো সৃষ্টি হয়েছে। নতুন ফাটলরেখার সঙ্গে কিছু বড় মাত্রার ভূমিকম্পের সম্পর্ক পাওয়া গেছে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথের পরিবর্তন এখনো চলছে।

নতুন ফাটলরেখার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত ইতিহাসবাহী ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ১৮৮৫ সালের ‘বেঙ্গল আর্থকোয়েক’। ঢাকার মানিকগঞ্জে উৎসস্থল, মধুপুর ফাটলরেখায় উৎপত্তি এবং রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৭। কম্পন ভারত, ভুটান ও মিয়ানমারের কিছু এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, ৭৫ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া ১৯২৩ সালে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ এলাকায় ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকপও নতুন ফাটলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ইতিহাস উদ্বেগজনক। হুমায়ুন আখতারের ২০১০ সালের গবেষণায় ১৫৪৮ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত মিয়ানমার, আসাম, শিলং ও বাংলাদেশে আঘাত হানা ৩৩টি শক্তিশালী ভূমিকম্পের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭। সম্প্রতি ২১ ও ২২ নভেম্বর দুই দিনে চার দফা ভূমিকম্পে ২১ নভেম্বর রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ১০ জনের মৃত্যু হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল আলম স্যাটেলাইট ম্যাপিং ব্যবহার করে ‘মর্ফোলজিক্যাল চেঞ্জ’ বিশ্লেষণে সহায়তা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অনেক ফাটলরেখা আছে, কিন্তু ফাটলরেখা থাকা মানেই উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প হবে, তা বলা যায় না।

সাবেক মহাপরিচালক এ কে এম খোরশেদ আলম বলেন, আক্তারুল আহসানের গবেষণা নির্ভরযোগ্য এবং এতে ফাটলের ব্যাপ্তি, শক্তি সঞ্চয় ও ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি সময় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।