এক সময় ত্রাণের চাল-ডাল চুরি করত জনপ্রতিনিধি ও সরকারদলীয় লোকজন! আমি একজন সংবাদকর্মী হিসেবে অনেক ভদ্রবেশি চোরকে এমনটা করতে দেখেছি; বাধা দিয়েছি; চাল-ডাল উদ্ধার করেছি। এখন ত্রাণ দেওয়ার জন্য মানুষের ভিড়।
বন্যায় মানুষ যে ভালোবাসার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে যাচ্ছে; তা বিশ্ব বিবেকে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। টিএসসি চত্বরে গণত্রাণ সংগ্রহ; আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জামায়াত-শিবির, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন সমাজসেবা ও জনকল্যাণমূলক সংগঠন, ফোরাম, সংস্থার ত্রাণ কার্যক্রম এবং মানবিক সহযোগিতা দেখে সত্যিই অভিভূত হয়েছি। অনেকেই মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা, জন্মদিনের জন্য জমানো টাকা, স্বপ্নের আশা পূরণের জমানো টাকা নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দিচ্ছে। কী এক মানবিক কর্মযজ্ঞ!
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এ বন্যায় একদম চুপচাপ থেকে, মায়াকান্না না করে, কোনো ভিডিও-ফটোসেশন না করে বন্যাকবলিতদের জন্য এক হাজার কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহের ঘোষণা দিলেন। ইতোমধ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো আওয়াজ নেই। কোনো ক্রেডিট নেওয়ার মানসিকতাও নেই।
তৃতীয় লিঙ্গ (হিজরা), এরাও থেমে নেই। নিজেদের জন্য জমা টাকা তারাও বিলিয়ে দিচ্ছে গণত্রাণে। রিকশাচালকরাও থেমে নেই। পাড়ায়, মহল্লায় মা-বোনদেরও মহা ধুম বন্যার্তদের সহযোগিতায়। ছোট ছোট শিশুরাও বাদ নেই। তারা তাদের জমানো টাকা বিলিয়ে দিচ্ছে এক অনন্য স্বতঃস্ফূর্ততায়। শিক্ষার্থীরা রাত-দিন এক করে কাজ করছে। কেউ থেমে নেই।
সাগ্রহে মানবসেবা চলছে তো চলছেই। আমার দেশের সেনাবাহিনী আমাদের হতাশ করেনি। তারাও যে দৃষ্টান্ত দেখিয়ে যাচ্ছে তা তুলনাতীত। দুর্যোগ, দুর্ভোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বরাবরের মতোই মানবতার ডাকে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিষ্টান, আদিবাসী কেউ বাদ নেই। সবার মানবিক কর্মযজ্ঞ দেখার মতো।
হিরক রাজার দেশে বড় হয়েছি। অভ্যস্ত হয়েছি দানবীয়তায় সহমত দাসে। এই দাসত্বে এমনটা কখনো স্বপ্নেও দেখিনি। এ যেন এক নতুন বাংলাদেশ দেখছি। দেশের প্রতি চরম দুর্বল হয়ে পড়েছি। দেশটা সবার হোক। স্বপ্নের দেশ হোক। বাসযোগ্য একটি মাতৃময়, কল্যাণকর রাষ্ট্র হোক। স্যালুট জানাই দুর্যোগে, দুর্ভোগে নিরেট দেশপ্রেমিক কর্মযজ্ঞের নতুন প্রজন্মকে।
লেখক : কলামিস্ট, গণমাধ্যমকর্মী, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।