আধুনিক মিডিয়া তথা নিউ মিডিয়ার বিপরীতে গতানুগতিক মিডিয়াকে টিকে থাকতে হলে নিজেদের কনটেন্টে খুব দ্রুতই পাঠক ও দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে। ক্ষেত্রমতে এই মনোযোগ আকর্ষণের সর্বোচ্চ সময় হতে পারে ছয় থেকে সাত সেকেন্ড।
মাত্র ৭ সেকেন্ডের মধ্যে পাঠক-দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করা না গেলে কোন সংবাদ পাঠকের মনে স্থান পাবে না। আধুনিক মিডিয়া, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সময়ে গণমাধ্যমের কনটেন্ট কেমন হওয়া উচিত, সে-বিষয়ক এক সেমিনারে এমনটাই জানান আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
রাশিয়ার নিজনি নভোগরদ শহরে চলমান ‘ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অ্যাসেম্বলি ২০২৫’-এ ‘মিডিয়া ২০৩০ : কনটেন্টের ভবিষ্যৎ’ শিরোনামে সেমিনারটি আয়োজিত হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে বক্তব্য রাখেন রাশিয়ার ডিএনকে মিউজিক পাবলিশিং হাউজের প্রতিষ্ঠাতা কিরিল ডিডেনক, দক্ষিণ আফ্রিকার ‘হোয়াট দ্য ফোরসাইট’-এর প্রতিষ্ঠাতা ক্রেইগ উইং এবং রাশিয়ান অ্যানালিটিক্যাল সেন্টারের প্রধান মিখাইল ভিনচুক। এতে সঞ্চালনা করেন রুশ সাংবাদিক ইভান কোরনিভ।
২০৩০ সাল নাগাদ এআইয়ের বিপরীতে মূলধারার গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে মিখাইল মিনচুক বলেন, ‘বর্তমানে গণমাধ্যম এমন একটি জায়গায় রয়েছে, যেখানে পাঠক বা দর্শকের মনোযোগ খুবই অল্প সময়ের মধ্যে আকৃষ্ট করতে হয়। তারা বেশি সময় দিতে চায় না।
আপনি যদি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে না পারেন, তাহলে তার মনেও স্থান পাবেন না। আর এটা করতে হবে ৬ থেকে ৭ সেকেন্ডের মধ্যে। এই সময়ের মধ্যে আপনার কনটেন্ট মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হলে আপনি পাঠক বা দর্শক হারাবেন।’
মিখাইল আরও বলেন, ‘আগে একটা সংবাদের রেশ পাঠক-দর্শকের মাঝে কয়েক দিন পর্যন্ত থাকত। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে একটা সংবাদের রেশ দুই থেকে তিন ঘণ্টাই দর্শকের মাঝে থাকে।’
তবে দ্রুত সংবাদ উপস্থাপন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন মিখাইল। বিশেষ করে এআইয়ের সাহায্য নিয়ে সংবাদ লেখার ক্ষেত্রে তথ্য কয়েক দফা যাচাইয়ে জোর দিয়েছেন তিনি।
ক্রেইগ উইং বলেন, ‘গণমাধ্যম ও বিনোদন খাতে এআইয়ের বাজার বাড়ছে। জেনারেটিভ এআই কনটেন্টের বাজারমূল্য ২০২৪ সালে ছিল ১৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন। ২০৩০ সাল নাগাদ এটি ৮০ দশমিক ১২ বিলিয়নে পৌঁছাবে।
রাশিয়ায় ডিজিটাল ইকোনমি গড়ে তুলতে এআইয়ের ব্যবহার বাড়াচ্ছে রাশিয়ার গণমাধ্যম ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। তবে আজকের যুবসমাজ এআই বিনোদনের যে নকশা তৈরি করবে, সেই নকশাই সিদ্ধান্ত নেবে যে, আগামীতে প্রযুক্তির উন্নয়ন হবে, নাকি প্রযুক্তি মানুষের বিবেককে প্রতিস্থাপন করবে।’
প্যানেল আলোচনা শেষে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বক্তারা। সেমিনারে দুই শতাধিক যুব প্রতিনিধি এই সেমিনারে দর্শক হিসেবে অংশ নেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়ার নিজনি নভোগরদ শহরে শুরু হয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অ্যাসেম্বলি ২০২৫’। রাশিয়ার ১ হাজার যুব প্রতিনিধির সঙ্গে বিশ্বের ১২০টি দেশের আরও ১ হাজার প্রতিনিধি এবারের আসরে অংশ নিচ্ছেন, যাদের মধ্যে ১৯ জন বাংলাদেশি প্রতিনিধিও রয়েছেন।