রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জে আই জাহিদ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ১১:১০ এএম

ক্যারিয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা

জে আই জাহিদ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ১১:১০ এএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া থেকে শুরু করে সব বিষয়ে মেয়েদের তুলনায় পিছিয়ে ছেলেরা। কারণ হিসেবে প্রযুক্তিতে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা আর পড়াশোনায় মনোযোগের ঘাটতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর প্রাপ্তির বড় জায়গা বিসিএস পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় তৈরি হয় সংকট, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারকে করে তোলে অনিশ্চিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছেলেরা প্রথাগত পড়াশোনা থেকে সরে গিয়ে অন্য কাজে মনোযোগ দেয়। অনেকে আবার পড়াশোনার বাইরে বিভিন্ন পেশাগত সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত কিংবা দরিদ্র ও অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা বেশি ঝুঁকি নিচ্ছে। কেউ ফ্রিল্যান্সিং করছে, কেউ উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে ঝুঁকছে। তবে অনেকেই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। অনেক ছেলে শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় বেশি ব্যয় করে থাকেন। ফলে সন্তানদের পড়াশোনায় মনোযোগ থাকে না বলে মনে করছেন অভিভাবকেরাও।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক মো. ফজলুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দেশের বর্তমান সার্বিক অবস্থায় মেয়েরা সাধারণত ঘরমুখী থাকে। সামাজিক কারণে মেয়েদের নিজ বাসায় থাকতে হয়। ফলে মেয়েরা পড়ার টেবিলে মোটামুটি বসে। এ ক্ষেত্রে ছেলেরা বিপরীত। তারা বাইরে সময় কাটায় বেশি, যে কারণে পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো- দেশের অনেকেই হতদরিদ্র। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ছেলেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য কর্মও চালিয়ে যেতে হয়। অনেকে দিনমজুরি ও কৃষিকাজ করে। ছেলেরা এই সময়টায় পড়াশোনা করতে পারে না বিধায় পরীক্ষার ফলাফলে পিছিয়ে থাকে। তবে অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে ছেলেদের পড়ালেখায় মনোযোগী করতে সহযোগিতা প্রয়োজন। এতে পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়া ছেলেদের এই অবস্থা কাটিয়ে তোলা যাবে বলে মনে করেন তিনি।

এসবের বাইরে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব। অনেক শিক্ষার্থী স্কুল পর্যায় থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবে অনেকাংশে পড়ালেখার ক্ষেত্রে ছেলেরা পিছিয়ে রয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ক্রমাগত পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন অনেকে। এ ছাড়া পরিবারের দায়িত্ব বহনে কর্মমুখী জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়া, তথ্যপ্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, ক্লাসে কম উপস্থিতি এবং নিয়মানুবর্তিতা ও অধ্যবসায়- কোনো ক্ষেত্রেই ছেলেদের পূর্ণ মনোযোগ না থাকার বিষয়টি বারবার সামনে উঠে এসেছে।

নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাক আহমেদ ভূঁইয়া রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, পরীক্ষার ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে থাকার অন্যতম কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তুলনামূলকভাবে মেয়েদের উপস্থিতি বেশি, তাই ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, ‘নরসিংদী কলেজে তিন বছর ধরে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের সময় আমি দেখেছি, যতগুলো পরীক্ষা হয়েছে সবগুলোতেই মেয়েরা এগিয়ে আছে। এর প্রধান কারণ হলো ছাত্ররা ক্লাসমুখী থাকছে না। সেখানে মেয়েদের ক্লাসে উপস্থিতি বেশি এবং পড়াশোনায় মনোযোগী। ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা শিক্ষকদের ও নিজেদের পাঠ্যক্রমের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক তৈরি করে। তাই যখন পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়, তখন দেখা যায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই ভালো ফল করছে।

গত কয়েক বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে অটোপাস বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অটোপাসের প্রবণতা অনেকাংশেই বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে মোস্তাক আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের অটোপাসের প্রবণতা মোটেও কাম্য নয়। কেননা, এই অটোপাসের ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা হারাচ্ছে। নিজেদের সৃজনশীল করে নিজেদের গড়ে তুলতে পারছে না।

ছেলেদের কিছু অংশ অল্প বয়সে শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। মূলত কম বয়সী ছেলেরা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতার জন্য কৃষিকাজ ও শিল্প কারখানায় কাজ করতে নেমে পড়ে। পরিবারের দায়িত্ব বহনের ক্ষেত্রে ঢাকার বাইরের বেশির ভাগ ছেলেকেই এসব কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রেও ছেলেরা পিছিয়ে পড়তে পারে। পড়াশোনার চাইতে কর্মমুখী জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়ার ফলে ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমানে অনেকেরই করপোরেট প্রতিষ্ঠান বা সরকারি চাকরির প্রতি আকর্ষণ থাকে। একসময় দেখা গেছে দেশে অনেক বড় সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রামের কোনো কলেজ থেকে পড়াশোনা করে বিসিএস পরীক্ষা দিতে।

এদিকে যেসব ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষার দিকে ধাবিত হচ্ছে, তারা সঠিক দিকনির্দেশনা ও ভালো ফলাফলের অভাবে বিসিএস দিতে পারছে না। একই চিত্র মেয়েদের ক্ষেত্রেও। ভালো ফল বা পড়াশোনায় এগিয়ে থাকলেও বিসিএসে তারাও যেন পিছিয়ে পড়ছে। এ ছাড়া রয়েছে আরও কিছু বিষয়। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর নিজের মতো করে ছাত্রছাত্রী উভয়েই নিজেদের তৈরি করার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে। এ ক্ষেত্রে চাকরির বাজার, বিদেশে উচ্চশিক্ষা কিংবা দেশের প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরির জন্যই নিজেদের তৈরি করছে।

বিগত বছরগুলোতে এইচএসসিতে ‘অটোপাস’ কিংবা বিষয় ম্যাপিং পরীক্ষার ফলে শিক্ষার্থীদের মেধা বিসিএসে কতটুকু প্রভাব পড়বে, সে প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক মো. ফজলুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই অটোপাস কিংবা বিষয় ম্যাপিং ফলাফলের কারণে একসময় যখন এই শিক্ষার্থীরা কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যাবে, তখন সমাজের একশ্রেণির মানুষ তাদের দিকে আঙুল তুলে বলবে, ‘এ তো অটোপাস করে আসছে, ও তো পরীক্ষা দিয়ে আসে নাই।’ তখন এসব ছেলেমেয়ে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি মনে করেন, এইচএসসিতে ‘অটোপাস’ কিংবা বিষয় ম্যাপিং পরীক্ষা না দিয়ে যদি আরও সময় নিয়ে তাদের পরীক্ষা নেওয়া যেত, তাহলে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে এ ধরনের অপবাদের শিকার হতো না।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগদানের পথ কতটুকু সুগম, সে প্রসঙ্গে নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাক আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তারাই হবে, যারা প্রকৃত মেধাবী। দেশে বর্তমান যে শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে, অটোপাস কিংবা পরীক্ষা না দিয়েও ফল ঘোষণা করা হচ্ছে, এটা কাটিয়ে উঠতে পারবে তারাই, যারা প্রকৃত মেধাবী এবং পড়াশোনা করবে। লেখাপড়াকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য নিজ দায়িত্বে চেষ্টা করবে, তবেই বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তাদের সুন্দর জীবন গড়তে পারবে বলে আমি মনে করি।’

বিসিএস বাংলাদেশে সরকারি পদে চাকরি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এবং সেই পরীক্ষার সহায়ক হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা একাধিক কারণে এই পথে যেতে চায়, যেমন- সরকারি সেবা, সামাজিক সেবা, ক্যারিয়ার সুযোগ, সামরিক ও আর্থিক সুরক্ষাসহ নানা অর্জনের দৌড়ে বর্তমান তরুণ-তরুণীরা।

চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা জান্নাত (আঁখি)। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশের কর্মক্ষেত্র অসন্তোষজনক হওয়ায় পড়াশোনা শেষ করে বিসিএসের প্রস্তুতি নেব। ভবিষ্যতে অনিশ্চিত ক্যারিয়ারের চেয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রস্তুতি নিলে হয়তো সফলতা আসবে। না হলে এই প্রস্তুতির ফলে কোনো এক পর্যায়ে চাকরি করে ক্যারিয়ার গড়া যাবে। এতে করে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে কিছুটা নিশ্চিত হওয়াসহ পরিবারের আপনজনদের মুখে হাসি ফোটানো যাবে।’

তেজগাঁও কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবুল হোসাইন বলেন, বিসিএস ছাড়া ক্যারিয়ার গোছানোর আর কোনো সুযোগ নেই। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে বিসিএস ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

নরসিংদী সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী ও বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা তাসলিমা হোসেন তাসলিমা। তিনি বলেন, বিসিএসের জন্য দীর্ঘ একটা সময় ব্যয় করতে হয়। এই সময়টা যদি ক্যারিয়ারের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়, তাহলে সময়গুলো সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়। এমনকি তা নিশ্চিত ক্যারিয়ার গড়তে সহযোগিতা করে। তা ছাড়া শিক্ষার্থীরা যে বিষয়ের ওপর পড়াশোনা করছে, সে বিষয়ের ওপরে যদি বিভিন্ন স্কিল ও গবেষণা করে, তাহলে সেই বিষয়ের ওপরেই ক্যারিয়ার গড়া যায়।

এ ছাড়া বিসিএস দিয়ে জীবনকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ করাকেই মূল হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে কোনো কোনো শিক্ষার্থী মনে করছেন সরকারির চেয়ে বেসরকারি চাকরিতে আয়ের সুযোগ বেশি। তবে অন্য পেশায় জীবন নিশ্চিত করতে না পারলে চাকরিপ্রার্থীরা বিসিএসের পেছনে ছুটবেন- এটিই স্বাভাবিক। তবে বিশেষজ্ঞদের মতামত, শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্র এবং সঠিক সুযোগ থাকলে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরা যেমন মনোযোগী হবে; তেমনি বিসিএস দেওয়ার দৌড়ে শিক্ষার্থীরাও এগিয়ে যাবেন।

আরবি/এফআই

Shera Lather
Link copied!