দখল-দূষণে প্রাণ হারিয়েছে দেশের শতাধিক নদী। আর জীবিত যে নদীগুলো রয়েছে, তার মধ্যে নাব্যসংকটে রয়েছে ৯০ ভাগ। গবেষণা বলছে, বর্তমানে দেশে ১০০৮টি নদী থাকলেও শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শতভাগ নদী এখনো দখল ও দূষণের শিকার। ফলে দিনে দিনে বাকি নদীগুলো রক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নদ-নদীর এই সর্বনাশের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন একমাত্র প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। অথচ নদী রক্ষায় একাধিক সংস্থা থাকার পরও দখলদারদের বিরুদ্ধে তাদের কোনো পদক্ষেপ কাজে আসছে না।
পরিবেশবাদী একাধিক সংস্থার তথ্যমতে, সারা দেশে বর্তমানে ১০০৮টি নদী থাকলেও তার শতকরা ৯০ ভাগ নাব্যসংকটে ভুগছে। আর শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শতভাগ নদী দখল ও দূষণের শিকার। এর মধ্যে বিলীন হয়েছে শতাধিক। অন্যদিকে বর্ষা মওসুমে বিভিন্ন জেলায় বন্যা ভয়াবহ পরিস্থিতি ধারণ করেছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে নদীর নাব্যসংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী ও রাজনীতিবিদদের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে নদীর দখল বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে। নদীর দখল ও দূষণের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে বলছে, বর্তমানে নদীর সংখ্যা ঢাকা বিভাগে ১৬৮, বরিশাল বিভাগে ৯০, খুলনা বিভাগে ১২৪, রাজশাহী বিভাগের ১১০, রংপুর বিভাগে ২৬৮, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩৫ ও সিলেট বিভাগে ৩৭টি। কিন্তু সামগ্রিক অর্থে নদীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি না হয়ে বর্তমানে তা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
অন্যদিকে আইইউসিএনের তথ্যমতে, জলবায়ুর পরিবর্তন, পরিবেশদূষণ, কলকারখানার বিস্তার, বনভূমি উজাড় করে কৃষি সম্প্রসারণ, যানবাহনে অধিক চাপ, অসচেতনতা প্রভৃতি কারণে নানা প্রজাতির প্রাণী আজ হুমকির মুখে। এ ছাড়া দেশের জলাশয় ও জলজ পরিবেশও ক্রমশ ধ্বংসের পথে। প্রাকৃতিক জলজ পরিবেশের গুণাগুণ হারিয়ে এখন দূষিত। পাশাপাশি ক্রমশ ভরাট হচ্ছে জলাশয়। জলাভূমি দূষণ, নগরায়ণ, ফসলের খেতে কীটনাশকের অধিক প্রয়োগসহ বিভিন্ন কারণে আবাসস্থলের সংকটে উভচর প্রাণীরা। চলমান অবস্থায় ইতিমধ্যে ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। অসংখ্য বন্যপ্রাণী আজ হুমকির সম্মুখীন।
 
এ ছাড়া অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে মানুষ এখন বনের দিকে হাত বাড়াচ্ছে। খাদ্য চাহিদা পূরণে অধিক ফসলের জন্য নতুন জমি, নতুন আবাসস্থল, স্থাপনা সবকিছুই হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট করে। অন্যদিকে ওই সব অঞ্চলে বসবাস করা বন্যপ্রাণীরা হারাচ্ছে আবাসস্থল। জলাশয়গুলো ক্রমেই দূষিত হচ্ছে। আর নষ্ট হচ্ছে জলজ পরিবেশে। 
বিরাজমান পরিস্থিতিতে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমাদ কামরুজ্জামান মজুমদার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রথমত আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে সব নদীর ওপর থেকে বাঁধ অপসারণ করা জরুরি। এর বাইরে নদীর নাব্যসংকট দূরীকরণে নতুন বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে সারা দেশের নদী খনন এবং সব নদীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ দখলদারি উচ্ছেদ প্রয়োজন। এ ছাড়া নদীমাতৃক অর্থনৈতিক শুরুত্ব তৈরি করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত আবাসন নীতিমালা প্রণয়নের সঙ্গে বিলুপ্তপ্রায় নদীর গতি ফিরিয়ে আনা এবং মানচিত্রে যেসব নদীর অস্তিত্ব রয়েছে, তা পুনরায় খননের ব্যবস্থা করতে পারলে তা কিছুটা হলেও সমাধান সম্ভব।
দোষীদের শাস্তি প্রদানে আইনগত ক্ষমতা প্রয়োগের বিধান রেখে আইন সংস্কারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, শক্তিশালী ও স্বাধীন বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশন বাস্তবায়নে লোকবল নিয়োগ, জলাশয় ভরাট বন্ধে দেশের সব জলাশয় চিহ্নিতকরণ, সীমানা নির্ধারণ ও খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। আর পরিবেশবাদী সংগঠন, গবেষক ও পরিবেশ সাংবাদিকদের সমন্বয়ে সরকারিভাবে স্টেকহোল্ডার বডি তৈরি করে মাসিক সেবা চালু করতে হবে। পরিবেশবিষয়ক গবেষণা জোরদার করতে জাতীয় বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি সব ধরনের দুর্নীতি বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে নদী রক্ষা অনেকটা সহজ হবে।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
       -20251031164732.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন