শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ১২:৩১ এএম

গণঅভ্যুত্থান আলোচনায় শিক্ষার্থীরা

উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ১২:৩১ এএম

গণঅভ্যুত্থান আলোচনায় শিক্ষার্থীরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রথম ছয় মাসের দিনপঞ্জি দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, চলতি বছরের শেষ ছয় মাসের ঘটনার ঘনঘটায় বছরটি স্থান পেতে চলেছে বাংলাদেশের ইতিহাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলন সাবেক আওয়ামী সরকারের পতন নিশ্চিত করবে, তেমনটা কারোর ভাবনার মধ্যেই ছিল না। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এইচএসসিতে অটোপাসের দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্তির দাবি বাতিল, চাকরিতে প্রবেশসীমা ৩৫ করার দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন-বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় আগস্টের পর থেকেই রাজপথ ছিল উত্তপ্ত। পাশাপাশি রাজধানীর ঢাকা সিটি কলেজ-ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সঙ্গে পুরান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী-কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি হামলা, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। অপমান করে শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের পদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনায় একশ্রেণির শিক্ষার্থীর নৈতিক অধঃপতনের বিষয়টি সব মহলে ব্যাপক সমালোচিত হয়। এ ছাড়া সাবেক আওয়ামী সরকারের নতুন কারিকুলাম বাতিল করে ২০১২ সালের পুরান কারিকুলামে ফিরে যাওয়া, পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন ইত্যাদিও ছিল আলোচনায়।

কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের কোটা সংস্কারের জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, একসময় তা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়।

৫ জুন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (নবম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে সংগঠিত হন এবং সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের সরকারি বিজ্ঞপ্তি পুনর্বহালের দাবিতে টিএসসি এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৫ জুন হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেন। পরদিন ৬ জুলাই শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ডাক দেন।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচির কারণে ঢাকা শহর স্থবির হয়ে পড়ে। অবরোধ ও বিক্ষোভ জোরালো হতে থাকে। এতে করে ঢাকাবাসী ও অন্যান্য জেলার সঙ্গে ঢাকায় যাতায়াতে মারাত্মক অসুবিধা হয়। পরে ১০ জুলাই সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে (নবম থেকে ১৩তম গ্রেড) কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। এই রায় সত্ত্বেও সরকার একটি ডেডিকেটেড কমিশন এবং পরবর্তী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

আন্দোলনের একপর্যায়ে রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, ‘মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা।

১৪ জুলাই সন্ধ্যায় একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা রাজাকার প্রসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এই মন্তব্যের পর রাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী অন্দোলন অন্য মাত্রা পায়। ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুতে আন্দোলন আরও উসকে ওঠে। এরপর শহিদদের গায়েবানা জানাজা ও শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘিরে স্থবির হয়ে পড়ে সারা দেশ। এদিন আন্দোলনকারীরা স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে যোগদানের আহ্বান জানান এবং সাধারণ নাগরিকদেরও সমর্থন জানিয়ে পাশে থাকার আহ্বান জানান। বিক্ষোভকারীরা ৩১ জুলাই ‘জাস্টিজের জন্য মার্চ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

১ আগস্ট সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২ আগস্ট  লাখো মানুষ ‘দ্রোহ যাত্রা’তে যোগ দেন। ৩ আগস্ট ছাত্রদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে লাখো মানুষ সমবেত হন। এদিন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক দফা দাবি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিক্ষোভকারীরা সারা দেশে নাগরিকদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ করার আহ্বান জানান। শুরুতে ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির আহ্বান জানানো হলেও পরে তা এক দিন আগে ৫ আগস্ট করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এদিন হাজারো মানুষ কারফিউ ভেঙে ঢাকার একাধিক মোড়ে জড়ো হয়ে রাজধানীতে প্রবেশের চেষ্টা করে। দুপুর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরে সেনাপ্রধান বেলা ২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা দেন। আর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারযোগে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেষ হয় আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন।

পদত্যাগের হিড়িক : ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘটনা ঘটলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্যাতন করে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো হয়েছে। এসব ঘটনায় অপমানিত হয়ে শিক্ষকদের আত্মহত্যা ও স্ট্রোকের মতো রোগে পড়তে হয়েছে।

অনেক শিক্ষককে জোর করে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষার্থী দ্বারা অপমানিত হয়ে প্রতিষ্ঠান ছাড়তে হবে এমন লজ্জায় পালিয়ে ছিলেন অনেক শিক্ষক। শিক্ষকদের প্রতি একশ্রেণির শিক্ষার্থীর এমন লজ্জাপূর্ণ ব্যবহারে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে সারা দেশ।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার হাছলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তায়জুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মানুষ। তবে পরে জানা গেছে, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এই প্রধান শিক্ষককে তাড়াতে তৎপর হয় একটি গোষ্ঠী।

একইভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদুল হককে পদত্যাগ করানো হয়। ঢাকার সরকারি আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক গীতাঞ্জলি বড়ুয়াকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মানুষের অপমানে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বড়চওনা ইউনিয়নের দাড়িপাকা গ্রামের  প্রাথমিক  শিক্ষক নুরুল ইসলাম (৫৫) ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। শিক্ষক নির্যাতন ও হেনস্তার ঘটনা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা বন্ধের নির্দেশ দেন। যদিও তারপরও বেশ কিছু ঘটনা ঘটে।

এইচএসসিতে অটোপাস ইস্যু : শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানো, লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের অদ্ভুত সব ঘটনায় দেশবাসী যখন অবাক, তখনই সামনে আসে এইচএসসিতে অটোপাস ইস্যু। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে কয়েক দফায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। অভ্যুত্থানের পর পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা আর পরীক্ষা দেবে না। স্থগিত পরীক্ষাগুলো সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশ করতে হবে।

এই দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ২০ আগস্ট সকাল থেকে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা, স্লোগান দিতে দিতে একপর্যায়ে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনার পর বোর্ড চেয়ারম্যান পরীক্ষা না নেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর গত ১৫ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। তবে এখানেও বিপত্তি বাধে। এইচএসসিতে ফেল করাদের অটোপাসের দাবিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন  শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও, ভাঙচুর এবং চেয়ারম্যানদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। একপর্যায়ে দাবি মানতে না পেরে পদত্যাগপত্র জমা দেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

পরে ফেল করা এসব শিক্ষার্থী তাদের দাবি আদায়ে সচিবালয়ে গিয়ে আন্দোলন শুরু করলে একপর্যায়ে কঠোর হয় সরকার। বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করে মামলা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের অটোপাসের এই দাবি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাস পরীক্ষার্থীদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়। তবে সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে আন্দোলন দানা বাঁধতে পারেনি।

৩৫+ প্রত্যাশীদের আন্দোলন : সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩৫ করার জন্য প্রায় ১২ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার দাবি আন্দোলনকারীদের। সাবেক আওয়ামী সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও একই দাবিতে রাজপথে ছিলেন আন্দোলনকারীরা। দাবির মুখে ৩০ সেপ্টেম্বর চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন করে সরকার। এ কমিটির প্রধান করা হয় সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে, যিনি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান।

গত ২৪ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করা হয়। এরপর গত ১৮ নভেম্বর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

কিন্তু আন্দোলনকারীরা এ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ২৪ নভেম্বর আন্দোলনকারীরা শাহবাগে জড়ো হয়ে সমাবেশ করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সেখানে দাঁড়াতে দেয়নি। পরে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে সমাবেশ করেন। সমাবেশ থেকে আন্দোলনকারীরা ২৮ নভেম্বরের মধ্যে চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করার আলটিমেটাম দেন। দাবি না মানলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা। এর পর থেকে এ বিষয়ে অন্দোলনের আর অগ্রগতি হয়নি।

সাত কলেজের আন্দোলন: ২০১৭ সালে রাজধানীর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষার মান উন্নয়নের যে লক্ষ্য নিয়ে এই পরিবর্তন করা হয়, অল্প কিছুদিন পরই এর মধ্যে ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয়। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ২০১৯ সালে কলেজগুলোর অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে টানা বিক্ষোভ করেন। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল ও স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে রাস্তায় নামেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। টানা বিক্ষোভ ও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে রাস্তায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানী।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে   অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় যে, এই সাতটি সরকারি কলেজ দেখভালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই পুরোপুরি আলাদা একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে আলাদা রেজিস্ট্রারসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন। তবে এ কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তই থাকবে। এর আগে গত ৩১ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছিলেন। কিন্তু সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেন। পাশাপাশি ঢাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ করেছেন। এদিকে সাত কলেজের অন্তর্ভুক্ত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা এই কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে প্রায় একই সময় মহাখালীতে রেললাইন অবরোধ করে একাধিক দিন বিক্ষোভ করেছেন। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় ট্রেনে ইটের আঘাতে নারী ও শিশু আহত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। সব মিলিয়ে সাত কলেজের আন্দোলন সংক্রান্ত পরিস্থিতি এখনো একই রকম রয়েছে।

কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র রাজধানী: ২০ নভেম্বর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকার সায়েন্সল্যাব এলাকায় ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দফায় দফায় ধরে চলা এই সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ৩৬ জন।  শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আহত হন সেনাবাহিনী, পুলিশ, অভিভাবক ও গণমাধ্যমকর্মীরাও।

দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। এতে দুপক্ষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেলেও পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী।

এর আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ মোট সাত দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ২০ দিন বন্ধ থাকার পর এদিনই শুরু হয় সিটি কলেজে ক্লাস। একই দিন ‘স্বৈরাচারের সহযোগী শিক্ষকদের’ পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ করছিলেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। বাসে ওঠাকে কেন্দ্র করে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। সেই হাতাহাতির জের থেকেই সংঘর্ষের শুরু। আহতদের মধ্যে অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এই ঘটনার রেশ শেষ না হতেই ২৪ নভেম্বর দুপুর ১২টা থেকে ডেমরার ড. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার ৩০টির বেশি কলেজের শিক্ষার্থীরা  পুরান ঢাকার কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান।

ডিএমআরসির শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসায় মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগে কলেজটির শিক্ষার্থীরা ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনরত মোল্লা কলেজের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ চালান। এরই প্রতিশোধ নিতে তারা হামলা চালান কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে। সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় কলেজ দুটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়।

পরেরদিন ডিএমআরসির শিক্ষার্থীদের হামলার প্রতিশোধ হিসেবে মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালান কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকেন সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে তারা লাঠিসোঁটা হাতে বের হন কবি নজরুল সরকারি কলেজের দিকে। বেলা ১১টার দিকে কবি নজরুল কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে মোল্লা কলেজের উদ্দেশে রওনা হন এ দুই কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী। পরে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালান তারা। হামলার পর মোল্লা কলেজের গেট ভাঙচুর করে ভেতরে ঢুকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ার, কম্পিউটার-ল্যাপটপ-ডকুমেন্টসহ মূল্যবান অসংখ্য জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়।

পর্যায়ক্রমে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি এই হামলার ঘটনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়ার এসব ঘটনার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের উৎসাহের বিষয়টি সারা দেশে তখন ব্যাপক আলোচনায় ছিল।

আরবি/জেডআর

Link copied!