বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৫, ১০:২৯ এএম

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ঘাটতি ১৮.১৫ বিলিয়ন

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৫, ১০:২৯ এএম

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ঘাটতি ১৮.১৫ বিলিয়ন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল সংকীর্ণ। যার কারণে প্রস্তাবিত ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের জ্বালানি খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। সরকারের নীতি সংকীর্ণতা এবং জ্বালানির মূল্য হঠাৎ বৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হয়। যার কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে মোট চাহিদার ১৮.১৫ বিলিয়ন ডলার সরকারের ঘাটতি রয়েছে।

মোট ২২.৬ বিলিয়ন ডলারের চাহিদা থাকলেও সরকার সরবরাহ করে মাত্র ৪.৪ বিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশের কৃষি খাতে সম্ভাবনা আরও বাড়াতে অস্ট্রেলিয়া সৌর প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী। 

অন্যদিকে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ফেরার আগে সরকারকে অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানি ত্যাগ করতে হবে। সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নির্ধারণ করেও সাবেক সরকার সংকীর্ণ নীতিমালা ধারণ করে এবং কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ফেরার ঘোষণা দিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থাৎ কয়লা, গ্যাস ও জ্বালানি তেল নির্ভরতা আরও বাড়িয়েছে সরকার।

একই সঙ্গে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নে চার বছরের বেশি সময় নিয়েছে এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো মহাপরিকল্পনা নেই। এ ছাড়া খসড়া নীতিমালা প্রণয়নে নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের জন্য মাত্র ২১ দিন দেওয়া হয়েছে, যা একেবারে যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। 

সিপিডির সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা তথ্যে জানা গেছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভরতা বাড়াতে সরকারের ২৬.৬ বিলিয়ন ডলারের চাহিদা। তার মধ্যে ন্যাশনাল ক্লাইমেটস ফাইন্যান্স থেকে ৩.১ বিলিয়ন এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে ০.১ বিলিয়ন মিলে মোট ৪.৪ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন পায় বাংলাদেশ সরকার। লক্ষ্যমাত্রার বেশির ভাগ অর্থ অর্থাৎ ১৮.১৫ বিলিয়ন ডলার সরকারের ঘাটতি থেকে যায়। 

তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগে আগ্রহী ছিল অনেক দেশ। এই খাতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন কৌশল বা অর্থায়ন ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা না থাকায় পরে পিছিয়ে যায় বিনিয়োগে আগ্রহী দেশগুলো। ঘাটতির অর্থনীতির গ্রিন এনার্জি খাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেও আর আগ্রহী হয়ে ওঠেনি।

বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বেড়েছে। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) ২০২৩ ও টেকসই এবং নবায়নযোগ্য জ¦ালানি অথরিটি-২০২৪ এর চিত্র অনুসারে ন্যাচারাল গ্যাসের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। কয়লানির্ভরতা ৮ শতাংশ, নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে ৫ শতাংশ, বিদ্যুতে ১০ শতাংশ এবং তেল ও অন্যান্য খাতে ২৭ শতাংশ হয়েছে।

জ্বালানি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের ব্যর্থতা সম্পর্কে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানির পরিকল্পনাগুলো অত্যন্ত সুসংহত হলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ততটা সুসংগঠিত নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালাটি প্রণয়নে সরকার বেশ তাড়াহুড়ো করছে। ফলে একটি দায়সারা ড্রাফট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারের ভিন্ন পলিসিতে ভিন্ন নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা থাকায় বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হতে পারেন।’ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নে সবসময় সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যায়। ফলে সফলতা অধরা থেকে যাচ্ছে এবং ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।

নাবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পর্কে ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ এশিয়া প্যাসিফিকের সমন্বয়কারী বারিশ হাসান চৌধুরী বলেন, ‘বেশির ভাগ দেশ নেট-জিরো লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও বাংলাদেশ এখনো এ ধরনের কোনো লক্ষ্য স্থির করেনি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালার সংজ্ঞাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তিকর। 

যদিও এটি কার্বন নির্গমন হ্রাসের কথা উল্লেখ করেছে, তবুও নির্দিষ্ট পরিমাণ বা সময়সীমা নির্ধারণ করেনি। নীতিমালায় ‘কার্বন মার্কেট’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা এই প্রেক্ষাপটে অপ্রাসঙ্গিক। তা ছাড়া, ভবিষ্যৎ জ্বালানি পরিবর্তনের জন্য এটি কোনো বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি দেয়নি। নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া এই নীতিমালা এক ধরনের দিকনির্দেশনাহীন নৌকার মতো, যা বাস্তবে কার্যকর ফল দিতে পারবে না।’

এ সময় সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের পরিচালক এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনাগুলো এমনভাবে করা হয় যেখানে লক্ষ্য খুবই অস্পষ্ট। কোন উৎস থেকে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে তাও উল্লেখ থাকে না। ফলে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয় না। অথচ চায়না, পাকিস্তান, ভারত ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো দ্রুতগতিতে এ খাতে সফলতা অর্জন করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত উপেক্ষিত। কারণ আমরা প্রকারান্তরে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসার স্বার্থ রক্ষা করছি। অথচ বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির দাম কমছে। আগামী ২০ বছর জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানিতে যে অর্থ ব্যয় হবে, তা দিয়ে এর চেয়ে ১০ গুণ সক্ষমতার নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি স্থাপন করা সম্ভব। 

এজন্য সরকারের তরফ থেকে শুধু বাস্তবসম্মত নীতি সহায়তা প্রয়োজন।’ জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পগুলো যে সহায়তা পাচ্ছে সেই সহায়তা পেলে বেসরকারি বিনিয়োগেই এই খাত এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অন্যদিকে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কোম্পানিগুলো ১০ বছর সম্পূর্ণ এবং ৫ বছর আংশিক কর অব্যাহতি পেলেও সাধারণ নাগরিকরা কোনো কর সুবিধা বা প্রণোদনা পাচ্ছেন না। 

অন্যান্য দেশে ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনে সরাসরি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রস্তাবিত নীতিমালায় এমন কোনো সুবিধা রাখা হয়নি। এমন নীতিমালার কারণেও এই খাত উপেক্ষিত হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!