বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৫, ১১:২৯ এএম

জামায়াত আমিরের ছেলেকে জঙ্গি বানানোর নাটক মনিরুল, আসাদুজ্জামান

মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৫, ১১:২৯ এএম

জামায়াত আমিরের ছেলেকে জঙ্গি বানানোর নাটক মনিরুল, আসাদুজ্জামান

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে গোপনে বৈঠকের পর নতুন ইস্যু তৈরির মাধ্যমে  কলঙ্কিত করে জনমনে ঘৃণা ছড়াতে জামায়াত আমিরের ছেলেকে জঙ্গি বানানোর নাটক সাজিয়েছিলেন সাবেক ৩ পুলিশ কর্মকর্তরা। 

তারা হলেন- পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম মনির, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান ও ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ। 

সূত্র জানায়, জামায়াত আমিরের ছেলেকে জঙ্গি বানানোর নাটকের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন পুলিশের এই ৩ কর্মকর্তা। তারা শুধু জামায়াত আমিরের ছেলেকে নয়, এমন বিএনপি-জামায়াতের অসংখ্য নেতাকর্মীকে বাসাবাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পাহাড় কিংবা সাগর বা নদীপথ ঘুরিয়ে এনে নতুন নতুন জঙ্গি নাটক সাজাতেন তারা। পুলিশ সদর দপ্তর ও গোয়েন্দা সূত্র রূপালী বাংলাদেশকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ও তার ছেলে ডা. রাফাত সাদিকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, পারিবারিকভাবে তাদের রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য এ মামলায় আসামি করা হয়েছিল।  

এ জন্য শেখ হাসিনা সরকারের কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা তাদের জঙ্গিবাদের তকমা লাগিয়ে দেন।  তবে তদন্তে তারা নির্দোষ প্রামাণিত হয়েছেন। এ থেকেই স্পষ্ট যে, মূলত চরিত্র হনন করার জন্যই তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী।

যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াত আমিরের ছেলে ডা. রাফাতকে: ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গিসংগঠন আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক সন্দেহে ডা. রাফাত সাদিক নামে একজনকে গ্রেপ্তারের পর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানান, জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে জামায়াত আমিরের ছেলেকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  এ সময় আসাদুজ্জামান দাবি করেন, গ্রেপ্তার রাফাত জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের ছেলে বলে জানা গেছে। 

তিনি বলেন, এর আগে ২০২২ সালের ১ নভেম্বর রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে আনসার আল ইসলামের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। তারা হলেন- সেজাদুল ইসলাম সাহাব তানিম ওরফে ইসা ওরফে আরাফাত ওরফে আনোয়ার ওরফে আনবির, মো. জাহিদ হাসান ভূঁইয়া ও সৈয়দ রিয়াজ আহমদ। 

গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ, সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক ডা. রাফাত সাদিকের নাম আসে। গ্রেপ্তার আসামিরা পুলিশকে জানান, তারা প্রত্যেকেই ডা. রাফাত সাদিকের দাওয়াত পেয়েই এই পথে এসেছেন এবং আসামিরা গত ৬ নভেম্বর আদালতে এ বিষয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন। 

তা ছাড়া ডা. রাফাতকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাফাত আগে ইসলামী ছাত্রশিবির করতেন। এ ছাড়া তার আগের তিনজন সহকারীও ছাত্রশিবিরের সদস্য ছিলেন। ডা. রাফাতের সঙ্গে গ্রেপ্তার আরিফও শিবিরের সদস্য ছিলেন।

৫ আগস্টের ফ্যাস্টিস আওয়ামী সরকার পতনের কয়েক মাস পরে এসব বিষয়ে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর ও সিটিটিসিতে দায়িত্বরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক সন্দেহে ডা. রাফাত সাদিককে বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসে জঙ্গি নাটক সাজানো হয়। দেশের মানুষের কাছে জামায়াতের নাম ক্ষুণ্ন করতে জামায়াত আমিরের ছেলেকে জঙ্গি বানানোর নাটকের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করে পুলিশের সাবেক ৩ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান ও হারুন। 

পুলিশের বিশেষ শাখার একটি সূত্র জানায়, তবে যাদের জঙ্গি নাটক সাজিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয় তারা সবাই জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।  যে কারণ তখনকার কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধা নিতে এবং অবৈধ্য পথে ক্ষমতায় রাখতে দেশের মানুষের কাছে জঙ্গি ও সন্ত্রাস হিসেবে তুলে ধরতেন। যাতে সাধারণ মানুষ জামায়ত-শিবিরকে ভুল বোঝে। 

ডা. রাফাতকে ধরার পরেই গণমাধ্যমে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানান, ডা. রাফাত দীর্ঘদিন ধরে আনসার আল ইসলামে সিলেট আঞ্চলিক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।  

তিনি ধর্মভীরু ছেলেদের জিহাদের জন্য দাওয়াত দিতেন।  এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের সংগঠন ‘আরসা’ এবং ‘আরএসও’ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও ছিল তার।  এই দুই সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি।

এর আগে ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সরাসরি সম্পৃক্ততা পেয়েছে সিটিটিসি- এমন অভিযোগে তাকে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তারও করা হয়। তাকে ধরার পর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান ও ডিবিপ্রধান এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নতুন নাটকীয় তথ্য জানান।  

তারা বলেন, আমরা জানি দেশের মানুষ অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করবেন না।  তবে বলতেই হয়, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সিলেটের বাসায় ডা. রাফাত ও তার অন্যান্য সহযোগীরা বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিসংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম চালাতেন।  যার পুরো বিষয় জামায়াত আমির অবগত ছিলেন।  তিনি এসবে সহযোগিতা করতেন। 

জুলাই-আগস্টের পর পুলিশের শীর্ষ ৩ কর্মকতা মনিরুল ইসলাম, মো. আসাদুজ্জামান ও ডিবিপ্রধান হারুন আর রশিদ আত্মগোপনে ও পালিয়ে যাওয়ার পর জামায়াতের আমির ও তার ছেলেকে দেওয়া পুলিশের মামলা তদন্তে নতুন মোড় নেয়। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকতা ও আইনজীবীর সূত্রে জানা যায়, মামলায় ছেলেসহ জামায়াত আমিরের জঙ্গিবাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি পুলিশ। 

রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে গিয়ে জঙ্গিবাদের অপবাদ দেয় পুলিশ: এ বিষয়ে অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আবুল বাসার জানান, মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা সবাই পূর্বপরিচিত। 

সেই সময়ে এজাহারনামীয় গ্রেপ্তার আসামি সেজাদুল ইসলাম সাহাব তানিম ও তার বন্ধু তাহিয়াত অন্য আসামিদের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য-সহযোগিতার জন্য প্রস্তাব দেন। তাদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে এজাহারনামীয় আসামিরা তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার জন্য রাজি হয়। 

কিন্তু তদন্তকালে প্রকাশ পায় যে, সেজাদুল ইসলাম সাহাব তানিম ও তাহিয়াতদের মূল উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গি সংগঠন আরএসএ ও আরএসওর (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) সঙ্গে যোগাযোগ করে আরাকান রাজ্যের সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে জিহাদে যোগদান করা।

সূত্র জানায়, সেজাদুল ইসলাম সাহাব তানিম ও তাহিয়াত তাদের মূল উদ্দেশ্য সবার কাছে গোপন রেখে তাদের নিয়ে ২০২১ সালের ১৮ জুন নাইক্ষ্যছড়ি এলাকায় যান। 

এ সময় ডা. রাফাত, আরিফসহ অন্য সদস্যরা তানিম ও তাহিয়াতের মূল উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন। তখন ডা. রাফাত তার বাবা শফিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তার বাবা সেখান থেকে নিরাপদে বাসায় আসার ব্যবস্থা করেন। তানিম ও তাহিয়াত নাইক্ষ্যংছড়ি অবস্থান করে আরএসএ ও আরএসওর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। 

পরে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে তারা সিলেটে বাড়ি ফিরে আসেন। কিছুদিন পর তাহিয়াত জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে হিজরত করেন। তদন্তকালে একাধিকবার চেষ্টা করে এবং সোর্স নিয়োগ করেও তাহিয়াতের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

 

আরবি/এসএম

Link copied!