বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৫, ১১:১০ এএম

যাদের জীবনে নেই উৎসবের আমেজ

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৫, ১১:১০ এএম

যাদের জীবনে নেই  উৎসবের আমেজ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

শুধু ঈদের আনন্দই নয়, কোনো উৎসবের আমেজ ছুঁয়ে যায় না তাদের। ঈদ কিংবা কোরবানিসহ বিভিন্ন উৎসবের টানা ছুটিতে নানা বয়সি নারী-পুরুষ আনন্দ ভাগাভাগি, নতুন পোশাক, ভালো খাবার আর প্রিয়জনের সঙ্গে কাটান বিশেষ মুহূর্ত। কিন্তু অনেকের সে সুযোগ নেই। 

কর্তব্যের বাধ্যবাধকতা আর অর্থাভাবে ঈদের আনন্দ তাদের কাছে দুঃখ আর হতাশার এক নাম। ঈদ উদযাপনের দিনেও তারা ব্যস্ত অন্যের জীবন ও সম্পদ রক্ষায়। দায়িত্ব পালনের কারণে তারা যেমন উৎসব থেকে দূরে থাকেন, তেমনি জোটে না কোনো বাড়তি সুবিধা। তারা হলেন- ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তারক্ষী। 

নগরজীবনে ব্যাংকিং সেবার এক অপরিহার্য অংশ হলেও, তাদের ঈদ কেমন কাটে সেটা দেখার কেউ নেই। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, সিকিউরিটি গার্ড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, এমনকি সমাজের সামর্থ্যবান মানুষরাও তাদের প্রতি নজর রাখেন না। 

ঈদের ছুটিতে রাজধানীর তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, ওয়ারী, পল্টনসহ বিভিন্ন স্থানে এটিএম বুথে দায়িত্ব পালন করা নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ কিংবা যেকোনো উৎসবে তাদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা থাকে না। প্রতিদিনের মতোই তাদের দিন কাটে বুথের নিরাপত্তায়। 

যাত্রাবাড়ীতে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকরি করেন জয়নাল। সকাল ৮টায় ডিউটি শুরু করেছেন। টানা চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। ১২ ঘণ্টার ডিউটি শেষে ফিরবেন ঘরে। আলাপকালে আলাল এই প্রতিবেদককে জানান, মাস ছয়েক আগে বেসরকারি এই ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নেন। চাকরি এখনো স্থায়ী হয়নি। তাই বোনাস নেই। কোনো ছুটি নেই। গত ছয় মাস টানা দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, জয়নাল থাকেন সানারপাড়ে। স্ত্রী আর পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া এক সন্তান নিয়ে তার সংসার। মাসে বেতন পান ১১ হাজার টাকা। ঘরভাড়া, সন্তানের পড়াশোনা, সংসার খরচ, চিকিৎসা ও ওষুধ কিনতে গিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা তার। মাস শেষের আগেই ধারকর্জ করতে হয় তাকে। এই পরিস্থিতিতে উৎসবের আনন্দ নেই তার।

তিনি বলেন, ঈদের কেনাকাটা বলতে গেলে তেমন কিছুই করতে পারেননি। ছেলের জন্য একটি জামা কিনেছি। স্ত্রীকে কিছু দিতে পারিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঈদের দিন সকালে স্ত্রী একটু সেমাই রান্না করেছে। সেটা একটু মুখে দিয়েই কাজে ফেরা। রাতে বাসায় ফিরতে ৯টা-১০টা বেজে যায়। এরপর আবার পরদিন সকালে কাজে ফেরার তাড়া। এভাবেই চলে যাবে ঈদের ছুটির কয়েকটা দিন। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা খাইট্যা খাওয়া লোক। সবার ঈদ আছে। আমাগোর ঈদ নাই। মাস শেষে যা পাই খাইয়া পইরা চলতেই পারি না।’

জানা গেছে, এটিএম বুথের নিরাপত্তারক্ষীরা কোনো ব্যাংকের স্থায়ী কর্মী নন। তাদের সরবরাহ করা হয় থার্ড পার্টি সিকিউরিটি কোম্পানির মাধ্যমে। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয় না, আবার সিকিউরিটি কোম্পানিগুলোরও নেই কোনো মানবিক উদ্যোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নিরাপত্তারক্ষী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঈদের দিনে যারা আমাদের এটিএম থেকে টাকা তোলেন, তারা একবারও আমাদের দিকে তাকায় না। আমাদেরও পরিবার আছে, আমাদেরও আনন্দ করার অধিকার আছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১৩ হাজার ৪২৮টি এটিএম বুথ রয়েছে। ঈদের সময় নগদ উত্তোলনের চাপ বেড়ে যায়, ফলে নিরাপত্তারক্ষীদের দায়িত্বও অনেক বেশি। কিন্তু তাদের প্রতি ব্যাংক বা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর কোনো মানবিক দৃষ্টি নেই। দেওয়া হয় না সম্মানজনক কোনো বোনাস। ঈদ উপলক্ষে দেওয়া হয় না নতুন পোশাক। নেই ঈদের বিশেষ ব্যবস্থা। সারা দিন দায়িত্ব পালনের পরও কোনো স্বীকৃতি পায় না তারা। 

পল্টনে ইসলামী ব্যাংকের এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, তার গ্রামের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়ায়। বাবা-মা ও তিন ভাই-বোন গ্রামে থাকেন। মাত্র এক মাস হলো এই চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, এখনো পুরো বেতন পাননি। ঈদের দিন খেজুর খেয়েই দুপুর পর্যন্ত পার করতে হয়েছে। নতুন পোশাক কেনার সামর্থ্য ছিল না, কারণ তার পাওয়া সামান্য টাকাও বাবার চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘বাবা অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি। বাবার চিকিৎসার জন্য অর্থ দরকার। ভাবছিলাম ঈদে ছুটি দিলে বাড়ি গিয়ে বাবাকে দেখে আসতাম। সেটা আর হলো না। ঈদের কোনো বোনাস দেয়নি। আধা মাসের বেতন পাইছি, সেটা বাবার অসুস্থতার জন্য বাড়িতে পাঠাইছি। ঈদে কাউকে কিছু কিনে দিতে পারিনি। নিজেও কিছু কিনতে পারিনি।’

ঢাকায় ফার্মগেটের সাউথইস্ট ব্যাংকের এক এটিএম বুথে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন সাতক্ষীরার নাজমুল হাসান। মাসে সাড়ে ৯ হাজার টাকা বেতন পেলেও ঈদে পাননি বোনাস, নতুন পোশাক পাননি তিনি। তিনি জানান, বাবা-মা ফোন করে অনেক আফসোস করেছে। 

বলেছে- ঈদে সবাই বাড়ি আসে, আর তুই আসিস না। চাকরি করে তো আর তা সম্ভব না। কিন্তু আমাদের সেই হিসেবে মূল্যায়ন করা হয় না, সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয় না। একই কষ্টের কথা বললেন অপর এক নিরাপত্তারক্ষী আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ‘কোম্পানি বলেছে ঈদের পর বোনাস দেবে, ঈদের পর বোনাস দিয়ে করব কী? পরিবার আছে, তাদের জন্যও কিছু করতে পারি না। আমাদের কষ্ট কেউ বোঝে না।’

 

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!