সিলেটে রেলপথের ওপর দিয়ে গেছে বিভিন্ন গ্রাম ও আবাসিক এলাকার সড়ক। আর সেই সড়ক দিয়েই চলাচল করছে মানুষ। নিয়মিত যানবাহন যাওয়া-আসা করলেও এসব রেলক্রসিংয়ে নেই কোনো গেটম্যান।
অরক্ষিত আড়াই শতাধিক রেলক্রসিংয়ের প্রতিটিই যেন একেকটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। অথচ এসব অবৈধ রেলক্রসিং দিয়ে প্রতিদিনই পার হচ্ছে পথচারী ও যানবাহন। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ক্রসিং নিরাপদ করতে সংশ্লিষ্টদের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোমিনখলা ও শিববাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য। কেবল এই এক-দুটি রেলপথই নয়, সিলেট বিভাগের ২৮৬টি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে অধিকাংশের একই অবস্থা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় অনুমোদনহীন রেলক্রসিং রয়েছে প্রায় ২৮৬টি।
এই চার জেলায় অনুমোদিত রেলক্রসিং প্রায় ৭২টি। অবৈধ ২১৪টি রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে সিলেট জেলায় প্রায় ৭১টি, মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় ৫৮টি, হবিগঞ্জ জেলায় প্রায় ৬৮টি, সুনামগঞ্জ জেলায় রয়েছে প্রায় ১৭টি।
কর্তৃপক্ষ বলছে, ২১৪টি রেলক্রসিংয়েরই নেই কোনো অনুমোদন। কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই স্থানীয় বাসিন্দারা চলাচলের জন্য এসব রেলক্রসিংয়ে রাস্তা গড়ে তুলেছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেট অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মো. আজমাঈন মাহতাব বলেন, ‘রেলওয়ের প্রকৌশল (পথ) বিভাগের এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সিলেট থেকে আখাউড়া পর্যন্ত প্রায় ২৮৬টি রেলক্রসিং রয়েছে।
এর বেশির ভাগেরই কোনো অনুমোদন নেই। অনেক অনুমোদনহীন রেলক্রসিং আমরা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে স্থানীয় বাসিন্দারা এগুলো পুনরায় চালু করে ফেলেন। তখন আমাদের কিছুই করার থাকে না।’
সিলেট-আখাউড়া রুটে এসব অবৈধ রেলক্রসিং গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ৩০টিরও বেশি।
অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিংগুলো হচ্ছে-সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোমিনখলা ও শিববাড়ী, খালেরমুখ বাজার, মোগলাবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ রেলস্টেশন, মাইজগাঁও রেলস্টেশন, মণিপুর চা-বাগান ও মোমিনছড়া চা-বাগান, ফেঞ্চুগঞ্জ-কুলাউড়া সড়কের বরমচাল,
ব্রাহ্মণবাজার-শমশেরনগর সড়ক ক্রসিং, মনু স্টেশন-শমশেরনগর, ভানুগাছ-কুমড়াকাঁপন সড়ক, ভানুগাছ-মুন্সিবাজার সড়ক, সাতগাঁও-সিন্দুরখান সড়ক, শাহজীবাজার-আশিদ্রোন সড়ক ও মিরপুর-তুঙ্গেশ্বর মাছের বাজার রেলক্রসিংয়ে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানিসহ অসংখ্য মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করলেও টনক নড়েনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। এসব ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিংয়ে অসংখ্যবার দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ।
প্রতি বছর নতুন সড়ক নির্মাণের ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য দেশে রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় লেভেল ক্রসিংগুলোতে পারাপারে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ।
সিলেটের শিববাড়ী এলাকার বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন বলেন, রেললাইনের একপাশে যানবাহন চলাচলের সড়ক, অপর পাশে বাসাবাড়ি ও দোকানপাট। এতে চলাচল করার কোনো বিকল্প রাস্তাও নেই।
তাই বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয়। কর্তৃপক্ষের উচিত এসব ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিংগুলো নিরাপদ করতে গেটম্যানসহ প্রয়োজনীয় পদেক্ষপ গ্রহণ করা।
সিলেট জিআরপি থানার অফিসার্স ইনর্চাজ মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘এসব ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিংয়ে পুলিশের টহল বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সীমিত জনবল দিয়ে সবখানে সাপোর্ট নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তার পরও আমরা চেষ্টা করছি যাতে রেলপথে দুর্ঘটনা না ঘটে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের সিলেট অঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা তাদের আওতাধীন। এই অঞ্চলে অনুমোদনহীন রেলক্রসিং রয়েছে প্রায় ২৮৬টি।
এই তিন জেলায় অনুমোদিত রেলক্রসিং প্রায় ৭২টি। এর মধ্যে সাতটিতে গেটম্যান থাকলেও বাকি ১২টি লেভেলক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই।
অবৈধ ১৬৭টি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে সিলেট জেলায় ৫৩টি, মৌলভীবাজার জেলায় ৪২টি, হবিগঞ্জ জেলায় ৫৯টি, সুনামগঞ্জ জেলায় রয়েছে ১৩টি। কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই স্থানীয় বাসিন্দারা চলাচলের জন্য এসব ক্রসিংয়ে রাস্তা গড়ে তুলেছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেট অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মো. আজমাঈন মাহতাব জানান, অবৈধ রেলক্রসিংগুলো বন্ধ করার জন্য ২০০৯ সালে রেল মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করা হয়।
রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-২-এর পক্ষ থেকে দেশের সব অবৈধ রেলক্রসিং বাতিল করতে রেল মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে।
পরবর্তী সময়ে রেল সচিবালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে নির্দেশ আসে যে, এলাকার স্বার্থে অবৈধ রেলক্রসিংগুলো নিরাপদ করতে স্থানীয়ভাবে গেটম্যান নিয়োগের ব্যবস্থা করার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সিলেট স্টেশনের ম্যানেজার মো. নুরুল ইসলাম বলেন, অনুমোদনহীন এসব সড়ক বন্ধ করে দিলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে স্থানীয় বাসিন্দারা পুনরায় তা চালু করেন। ফলে চেষ্টা করেও এসব সড়ক স্থায়ীভাবে বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
 

 
                            -20250409190115.jpg) 
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন